বেফাকের প্রশ্ন-উত্তর। মিশকাতের মুকাদ্দামা থেকে

বেফাকের প্রশ্ন-উত্তর। মিশকাত মুকাদ্দামা থেকে 


🔶 من صاحب المشكوة؟ ومن صاحب المصابيح؟

🔷 মিশকাত ও মাসাবীহ -এর সংকলকদ্বয় রহ.:

🔹মাসাবীহ গ্রন্থটির সংকলক হলেন, মহিউসসুন্নাহ হাফেজ শায়খুল ইসলাম আল্লামা আবূ মুহাম্মদ হুসাইন ইবনে মাসউদ বাগাভি রহ.। 

🔹আর মিশকাত গ্রন্থটির সংকলক হলেন শায়খ ওলী উদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ খতিব তিবরিযী রহ.।


🔶 اكتب نبذة من حياة مؤلف المصابيح.

🔷 কিতাবুল মাসাবিহ এর লেখক:

🔹কিতাবুল মাসাবিহ এর লেখক আবু মুহাম্মদ হোসাইন বিন মাসউদুল ফাররা বাগাভী রহ.। নিজ যুগের তিনি বড় ইমাম ছিলেন। প্রতিটি শাস্ত্রে তাকে ইমাম ও অনুসরণীয় গণ‍্য করা হত। সে যুগে মুফাসসির মুহাদ্দিস ও ফতওয়া প্রদানকারীদের শীর্ষে ছিলেন। তার রচিত কিতাব شرح السنة، تفسير معالم التنزيل এবং শাফেয়ী মাযহাবের উপর রচিত فتاوى بغوي এর সাক্ষ্য বহন করে। 


শাফেয়ী মাযহাবের প্রসিদ্ধ আলেম কাজী হোসাইন রহ. -এর নিকট ফিকাহ পড়েন এবং হাদীছের সনদ অর্জন করেন সে যুগের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসীনে কেরাম থেকে। 

তিনি হিজরী ৪৩৫ সনে জন্ম গ্রহণ করেন এবং হিজরী ৫১৬ সনে ইন্তেকাল করেন। স্বীয় উস্তাদ কাজী হোসাইন রহ.-এর কবরের পাশে مَرُو('মার্ভ') শহরে তাকে দাফন করা হয়।


🔶 اكتب نبذة من حياة مؤلف المشكوة.

🔷মিশকাত গ্রন্থকারের সংক্ষিপ্ত জীবনী: 

মিশকাতের লেখকের নাম মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ। উপনাম আবু আব্দুল্লাহ। উপাধী হল ওলী উদ্দিন। খতীবে তিবরিযী (বা তাবরিযী) নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি হিজরী অষ্টম শতাব্দীর প্রসিদ্ধ আলেমদের একজন ছিলেন এবং আপন যুগের বিশিষ্ট মুহাদ্দিস এবং فصاحت ও بلاغت এর ইমাম ছিলেন। সে সময়ে তাতারীদের ফেতনা ছিলো খুবই ভয়াবহ। তাই কোন কিতাবে তার পূর্ণজীবনী লেখা হয়নি। ফলে তার জন্ম তারিখ যেমন জানা যায়নি, তেমনি মৃত্যু তারিখও জানা যায়নি। তবে অনুমান করে বলা যায় যে, তার ইন্তেকাল হিজরী ৭৩৭ সনের পরেই হয়েছে। কেননা মিশকাত শরীফ সংকলনের কাজ তিনি ৭৩৭ হিজরী সনে সমাপ্ত করেন। তার সম্পর্কে এরচে' বেশি কিছু বলা সত্যিই মুশকিল।

-দরসে মেশকাত


🔶 ما معنى مشكوة المصابيح؟ اذكر مع وجه التسمية.

🔷  مشكاة المصابيح -এর অর্থ:

🔹 مشكاة অর্থ, তাক বা চেরাগদানি। আর مصابيح শব্দটি مصباح -এর বহুবচন। অর্থ হল- চেরাগ। সুতরাং مشكاة المصابيح অর্থ হবে চেরাগদানি।


🔷 مشكوة المصابيح নামকরণের কারণ:

🔹مشكوة শব্দের অর্থ, তাক। আর مصابيح হল- মূল কিতাবের নাম। তাক ছাড়া বাতি আলো কম ছড়ায়, তাকে রাখলে আলো বেশী ছড়ায় এবং ফায়দাও বেড়ে যায়। তদ্রূপ মাসাবীহ গ্রন্থের জন্য ওলী উদ্দীন রহ.-এর মিশকাত কিতাবটি হলো তাক স্বরূপ। "মাসাবীহ" কিতাবটি সনদ এবং মূল কিতাবের উদ্ধৃতিহীন ছিলো। তাই আলো কম ছড়াচ্ছিলো এবং ফায়দাও কম হচ্ছিলো। অতঃপর মিশকাত শরীফের গ্রন্থকার যখন সনদ ও মূল কিতাবের উদ্ধৃতিসহ "مصابيح" কিতাবের হাদীসগুলোকে উল্লেখ করলেন তখন কিতাবটির আলো এবং ফায়দা আরো বেড়ে গেলো। তাই লেখক কিতাবটিকে مشكوة المصابيح নামে নামকরণ করেছেন।

🔹নামকরণের আরো একটি কারণ উল্লেখ করা হয়। তা হল- مصابيح শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হুজুর সা. -এর হাদীস। নবীজী সা.-এর হাদীসগুলো বাতি স্বরূপ। আলো যেমন অন্ধকার দূর করে। তেমনি নবীজী সা.-এর হাদীস সমূহ অভ্যন্তরীণ অন্ধকার দূর করে অন্তরে ঈমানের আলো প্রজ্জ্বলিত করে। কিন্তু এ হাদীসগুলো বিক্ষিপ্ত, সনদহীন এবং মূল কিতাবের উদ্ধৃতি ছাড়া উল্লেখিত হওয়ায় ফায়দা কম হচ্ছিলো। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য এগুলো থেকে আলো গ্রহণ করা সম্ভব ছিলো না। মিশকাতের গ্রন্থকার এসব হাদীসগুলোকে সনদসহ মূল কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে একত্র করেছেন। তাই এ হাদীস সমূহের আলো এবং উপকারিতা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। মিশকাত কিতাবটি যেন হাদীস সমূহের জন্য তাক স্বরূপ হলো। অতএব এই নামে নামকরণ করা যথাযথ হয়েছে।

-দরসে মেশকাত


🔶 ما سبب تأليف مشكوة المصابيح؟

🔷 মিশকাতুল মাসাবীহ রচনার কারণ

🔹লোকেরা যখন মাসাবীহ কিতাবের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলল তখন মিশকাত কিতাবের সংকলকের উস্তাদ; আল্লামা তীবী রহ. তাঁকে বললেন যে , তুমি এমন একটি কিতাব লেখ, যাতে মাসাবীহ কিতাবে যে ঘাটতিগুলো আছে তা পূরণ হয়ে যায়। তিনি স্বীয় শায়েখের হুকুম পালনার্থে মিশকাত লেখা শুরু করেন। 
তিনি সনদবিহীন হাদীসগুলোতে সনদ তথা সাহাবীদের নাম যুক্ত করেন এবং প্রতিটি হাদীসকে যথাস্থানে রেখে দেন। প্রত্যেক বাবের আওতাধীন হাদীসগুলোকে তিনটি "ফসল'' বা পরিচ্ছদে বিভক্ত করেন।
-দরসে মিশকাত

🔶 اذكر حل لغات الألفاظ التالية: شوارد، أوابد، أغفال،

🔷 শব্দাবলীর বিশ্লেষণঃ

🔹 شوارد، এটি شاردة এর বহুবচন। অর্থ পালায়নকারী। এখানে উদ্দেশ্য হলো- দুর্লভ, বিক্ষিপ্ত।
🔹أوابد এটি آبِدَة এর বহুবচন। অর্থ বন্যজন্তু যা পালায়ন করে।
🔹أغفال এটি غُفْلٌ এর বহুবচন। নামবিহীন, চিহ্ন দেওয়া হয়নি এমন।

🔶 أوضح غرضَ المؤلف العلام (رح) بهذا النص "كان كتاب المصابيح الذي صنف الإمام … ...أعلام كالأغفال"

🔷 উক্ত ইবারত দ্বারা গ্রন্থাকারের উদ্দেশ্য:

🔹এই ইবারত দ্বারা মুসান্নিফ রহ. - এর مشكوة المصابيح কিতাবটি রচনার কারণ বর্ণনা করা উদ্দেশ্য। যদিও ইমাম বাগাভী রহ.-এর রচিত 'মাসাবীহ' নামক কিতাবটি অনেক দিক থেকে স্বাতন্ত্রের অধিকারী। তবে তাতে কিছু কর্ম-পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল। ফলে সেই ত্রুটিগুলো দূর করার জন্য নতুন কিতাব লেখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তাই আমি مشكوة المصابيح রচনা করেছি।


🔶 عَيِّنْ مرجعَ الضميرِ المجرورِ في قوله "قد فرغوا منه" وفي قوله "اقتفيتُ اثرَه" ثم اذكر ما هو اول الفصول وما ثانيها.


🔷 ضمیر এর مرجع নির্ণয়ঃ

🔹 قد فرغوا منه এ বাক্যটিতে منه এর ه যমিরের مرجع হলো, إسناد كامل । অর্থাৎ, أسندتُ 

🔹اقتفيتُ اثرَه এ বাক্যে ه যমিরের مرجع হলো– মাসাবীহ গ্রন্থকার, আল্লামা আবূ মুহাম্মদ হুসাইন ইবনে মাসউদ বাগাভি রহ.।


🔹প্রথম فصل দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, সেসব হাদীস যা ইমাম বুখারী ও মুসলিম অথবা তাঁদের কোনো একজন বর্ণনা করেছেন।

☆ দ্বিতীয় فصل দ্বারা উদ্দেশ্য হলো– বুখারী-মুসলিম ব্যতীত উল্লেখিত অন্যান্য ইমামগণের বর্ণনাকৃত হাদীস।


🔶 عَيِّنِ المشارَ إليه لـ "ذلك" في قوله "وقف على ذلك" وبَيِّنِ المُرادَ بـ "الاصول" في قوله "مما في الاصول"


🔷 مشار إليه নির্ণয় ও أصول-এর উদ্দেশ্য বর্ণনা:

🔹ذلك- এর مشار إليه সে সকল হাদীস; যেগুলো সম্পর্কে মুসাফে রহ. বলেছেন, আমি তা উসুলের কিতাবগুলোতে পাইনি অথবা এর বিপরীতমুখী হাদীস পেয়েছি।


🔹أصول- এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- জামে তিরমিযী, সুনানে আবূ দাউদ ও বায়হাকী প্রমুখ কিতাবসমূহ।


🔶 عين الشيخ في قوله "سلكها الشيخ" رضي الله عنه

🔷 شيخ নির্ণয়ঃ

🔹 এখানে শায়খ দ্বারা উদ্দেশ্য- ইমাম বাগাবী রহ.



🔶 ما هي وجوه الفرق بين المشكوة والمصابيح وكم حديثا في المصابيح وكم زيدت في المشكوة؟


🔷 مصابيح এবং مشكوة এ দুটি কিতাবের মধ্যে পার্থক্যঃ

🔹১. مصابيح-এর মধ্যে হাদীসের মতনের সাথে রাবীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু মিশকাতের মধ্যে হাদীসের মতনের সাথে সাথে রাবীর নামও উল্লেখ করা হয়েছে।


🔹২. مصابيح -এর মধ্যে বুখারী ও মুসলিম থেকে যে হাদীসগুলো আনা হয়েছে, তা من الصِحَاح অনুশীলনের মধ্যে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু মিশকাতের মধ্যে তা الفصل الأول -এর মধ্যে আনা হয়েছে।


🔹৩. সিহাহ সিত্তার কোন্ কোন্ কিতাব থেকে হাদীসগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে, এর মধ্যে তার কোনো উদ্ধৃতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু মিশকাত শরীফের মধ্যে তার উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। যেমন- হাদীসের শেষে বলা হয়েছে– رواه مسلم، رواه البخاري متفق عليه ইত্যাদি।


🔹৪. মাসাবীহ কিতাবের মধ্যে বুখারী ও মুসলিম শরীফ ছাড়া অন্যান্য কিতাবের হাদীসগুলো من الحسان শিরোনামে আনা হয়েছে। অথচ সেগুলোকে মিশকাতের মধ্যে الفصل الثاني শিরোনামে উল্লেখ করা হয়েছে। 


🔹৫. মাসাবীহ কিতাবের প্রত্যকটি باب -এর মধ্যে দুটি করে فصل ছিল, কিন্তু মিশকাত শরীফের অধিকাংশ باب -এর মধ্যে ৩ টি করে فصل রয়েছে। 


🔹৬. مصابيح এর মধ্যে শুধু مرفوع حديث আনা হয়েছে। অথচ মিশকাত শরীফের মধ্যে الفصل الثالث- এর ভেতর مرفوع এর সাথে সাথে موقوف ও مقطوع হাদীসও আনা হয়েছে।


🔷 মিশকাতুল মাসাবিহ এর হাদিস সংখ্যাঃ

🔹মুহাদ্দিস ইবনুল মালিক রহ. লিখেছেন, مصابيح এর মধ্যে মোট হাদীস ছিল ৪৪৮৪ টি। 

☆ আল্লামা খতিব তিবরীযী রহ. নিজের পক্ষ থেকে ১৫১১ টি হাদীস সংযোজন করেছেন। এখন মিশকাত শরীফের মোট হাদীসের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৯৯৫ টি। সংখ্যা পূরণ করে অনেক সময় ছয় হাজারও বলা হয়। 


☆ মোল্লা আলী কারী রহ. মিশকাতের শরাহ মিরকাতের মধ্যে উল্লেখ করেছেন, مصابيح -এর হাদীসের সংখ্যা ছিল ৪৪৩৪ টি। এর উপর মিশকাত প্রনেতা নিজের পক্ষ থেকে ১৫১১ টি হাদীস সংযোজন করেছেন। বর্তমানে মিশকাতুল মাসাবীহের মোট হাদীসের সংখ্যা হলো ৫৯৪৫।

কিতাবুল ঈমান থেকে প্রশ্ন-উত্তর

Post a Comment

0 Comments