কিতাবুল ঈমান থেকে প্রশ্ন-উত্তর
মুকাদ্দামার প্রশ্ন-উত্তর দেখতে ক্লিক করুন
🔶 اكتب معنى الإيمان لغةً واصطلاحًا
🔷 ঈমানের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থঃ
🔹ايمان শব্দের আভিধানিক অর্থঃ
☆ التصديق বিশ্বাস করা।
☆ الانقياد আনুগত্য করা।
☆ الخضوع অবনত হওয়া।
☆ الوثوق বিশ্বাস করা।
☆ الإذعان স্বীকৃতি দেওয়া ইত্যাদি।
🔹إيمان -এর পারিভাষিক অর্থঃ
☆ হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযালী রহ. বলেন,
الإيمان هو تصديق النبي صلى الله عليه وسلم بجميع ما جاء به
অর্থাৎ, নবী করীম সা.-এর আনীত সকল বিধানসহ তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।
-তানযীমুল আশতাত
☆ ইমাম আবূ হানীফা রহ. বলেন,
هو التصديق بالجنان والإقرار باللسان
আর্থাৎ, আন্তরিক বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকৃতি হলো ঈমান।
-তানযীমুল আশতাত
☆ জমহুর মুহাদ্দিস ও তিন ইমামের মতে-
الإيمان هو التصديق بالجنان والإقرار باللسان والعمل بالأركان
অর্থাৎ, অন্তরের বিশ্বাস মৌখিক স্বীকারোক্তি এবং আরকানসমূহ কাজে পরিণত করার নাম ঈমান।
তবে তাঁদের নিকট মৌখিক স্বীকারোক্তি এবং আরকান কার্যে পরিণত করা এ দুটি ঈমান পূর্ণ হওয়ার অংশ, মৌলিক অংশ নয়। কাজেই তাদের নিকট ইবাদত ত্যাগকারী ও কবীরা গুনাহকারী ফাসেক, কাফের নয়।
🔶 اكتب معنى الإسلام لغة واصطلاحا
🔷 ইসলামের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ।
🔹إسلام শব্দের আভিধানিক অর্থ-
☆ التسليم আত্মসমর্পণ করা। বিনয়াবনত হওয়া
☆ الانقياد মেনে নেওয়া
☆ الاطاعة আনুগত্য করা
☆ القبول গ্রহণ করা
🔹إسلام -এরপারিভাষিক অর্থঃ
☆ ইমাম আবূ হানীফা রহ. - এর মতে,
التسليم والانقياد لأوامر الله تعالى و رسوله ﷺ
আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশসমূহ মেনে চলাই হলো ইসলাম।
☆ আল্লামা আইনী রহ. বলেন,
هوالانقياد لله تعالى بِقبول أَمْرِ رسول اللہ ﷺ والتَلَفُّظُ بكلمة الشهادة والاِتْيَانُ بالواجباتِ والإمتناعُ عن المنكراتِ
অর্থাৎ রাসূলের আদেশ মান্য করে আল্লাহ তা'আলার আনুগত্য করা, কালিমায়ে শাহাদাত উচ্চারণ করা এবং আবশ্যকীয় কার্যসমূহ পালন করা আর নিষিদ্ধ কাজসমূহ বর্জন করা।
মোটকথা, যাবতীয় বিধিবিধানকে একাগ্রচিত্তে মেনে চলা ও নিষিদ্ধ কাজসমূহ পরিহার করাকেই ইসলাম বলে।
💖 ১নং হাদীস থেকে
☆ عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال بينما نحن عند رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات يومٍ إذ طلع رجلٌ …. … (صـ١١)
🔶 بماذا يَتَلقّب هذا الحديث ولما بدأ به المؤلف كتابه؟ (صـ١١)
🔷 হাদিসের নামকরণ
🔹 এ হাদীসটিকে হাদীসে জিবরাঈল বলা হয়। হযরত জিবরাঈল ই.-এর স্বশরীরে আগমন এবং তার প্রশ্নের মাধ্যমে হাদীসটির অবতারণা হয়েছে। তাই হাদীসটিকে হাদীসে জিবরাঈল বলা হয়। এ ছাড়া হাদীসটিকে أمُّ السنّة বা أم الأحاديث-ও বলা হয়। কেননা, হাদীসটিতে ইসলামের সবগুলো মৌলিক বিষয় সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণিত হয়েছে।
🔷 গ্রন্থকার তার কিতাবকে এই হাদীস দ্বারা কেন শুরু করেছেন?
🔹হাদীস শাস্ত্রবিদগণ এর কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন:
☆ ১. আল্লামা ْزَرْكَشِي রহ. বলেন, আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ
"তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে" (বাইয়্যিনাহ, আয়াতঃ ৫)
তাই গ্রন্থকার নিয়তকে পরিশুদ্ধ করা এবং আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে উক্ত হাদীসকে কিতাবের শুরুতে উল্লেখ করেছেন।
☆ ২. হযরত ওমর রা. ভাষণের শুরুতেই এ হাদীসটি পাঠ করতেন, তাই গ্রন্থকারও হযরত ওমর রা. -এর অনুসরণে হাদীসটি কিতাবের শুরুতে এনেছেন।
☆ ৩. ইমাম বুখারী, মুসলিম, খাত্তাবীসহ প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ যেহেতু নিজ নিজ গ্রন্থের সূচনাতে এ হাদীসটি এনেছেন, তাই মেশকাত প্রণেতাও তাঁদের অনুসরণে এ হাদীসটি কিতাবের শুরুতে এনেছেন।
☆ ৪. হাফেজ ইবনে মাহদী, ইমাম নববীসহ প্রমুখ বলেছেন-
من أرادَ أَنْ يُصَنِّف كتابا فاليبدأْ بهذا الحديثِ
এ উক্তির ভিত্তিতেই গ্রন্থকার তাঁর কিতাবের সূচনাতে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
☆ ৫. অথবা, মুকাদ্দামাতে হাদীসটি এনে গ্রন্থকার অধ্যয়নকারীদের পরিশুদ্ধ নিয়তের প্রতি অনুপ্রাণিত করেছেন।
☆ عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال بينما نحن عند رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات يومٍ إذ طلع رجلٌ …. … يتطاولون في البنيان (صـ١١)
🔶 شكل وترجم وبين محل اغراب "بينما".
🔷 "بينما"-এর محلّ اعرا বর্ণনা
🔹"بينما"-এর محلّ اعرا হল- منصوب علی الظرف
🔶 بيّن مصداقَ "رَجُلٌ"
🔷 رَجُلٌ-এর মিসদাক নির্ণয়:
🔹رَجُلٌ-এর مصداق হলেন– হযরত জিবরাঈল আ.
🔶 إلامَ يرجع ضمير "فخذيه" في قوله "وضع كفيه على فخذيه" (صـ١١)
🔷 ضمیر এর مرجع নির্ণয়ঃ
🔸এ ব্যাপারে ২ টি অভিমত রয়েছে।
🔹১. হযরত জিবরাঈল আ. -এর দিকে ফিরেছে। অর্থাৎ তিনি শাগরেদের মত স্বীয় রানে হাত রেখে বসলেন।
🔹২. নবী করীম সা.-এর দিকে ফিরেছে। যেমনটি নাসায়ীসহ কোনো কোনো হাদীসের কিতাবে রয়েছে।
-তাযীমুল আশতাত
🔶 أوضح قوله: عليه السلام ''أن تعبد الله كأنك تراه الخ'' (صـ١١)
🔷 নবীজি সা.-এর উক্তির ব্যাখ্যাঃ
🔹এখানে ইহসানের দুটি অবস্থার কথা বলা হয়েছে। দুটির মধ্যে উন্নত অবস্থা হল– তার মাঝে মাওলা পাকের দর্শনের হালত প্রবল হওয়া। সে চূড়ান্ত পর্যায়ের আল্লাহর প্রেম-ভালোবাসার দরিয়ায় এমনভাবে নিমজ্জিত হবে যেন সে আল্লাহ তায়াকে অবলোকন করছে। দ্বিতীয় পর্যায় হল– আল্লাহ্ তায়ালা তার অবস্থা জানেন, তার আমলগুলো সর্বদা দেখছেন সেটা অন্তরে জাগ্রত রাখা।
-তানযীমুল আশতাত
☆ মোল্লা আলী কারী রহ. লিখেছেন,
أن تعبد الله عبادةً شبيهةً بعبادتك حين تراه
অর্থাৎ , তুমি তাঁর সামনে সরাসরি দাঁড়ালে যেমন ইবাদত করতে, তেমন ইবাদত করবে। অথবা, এর ব্যাখ্যা হবে
أن تعبد الله حال كونها مُشبِّهًا بمن ينظر إلى الله خوفا منه وحَياءً و خضوعا وخشوعًا وادبًا ووفاءً
অর্থাৎ, তুমি ঐ ব্যক্তির মতো ইবাদত করবে, যে আল্লাহর প্রতি দৃষ্টি রাখে– ভয়, লজ্জা, বিনয়, শিষ্টাচার ও অঙ্গীকারের চোখে।
🔶 أوضح قوله : عليه السلام "ما المسؤول عنها بأعلم من السائل" (صـ١١)
🔷 ما المسؤول عنها بأعلم من السائل এ কথার ব্যাখ্যা:
🔹কেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে হুজুর চাইলে ما أنا أعلم بها منك (এ সম্পর্কে তোমার চেয়ে আমার অধিক জানা নেই) বলতে পারতেন। কিন্তু এর স্থলে আমভাবে বলার উদ্দেশ্য হল– কেয়ামত সম্পর্কে প্রত্যেক প্রশ্নকারী ও উত্তরদাতার একই অবস্থা। অর্থাৎ প্রশ্নকারী এবং উত্তরদাতা কেউ-ই কেয়ামতের নির্ধারিত সময় সম্পর্কে জানেনা।
☆ ইঙ্গিত মূলক বক্তব্য স্পষ্ট বক্তব্যের তুলনায় অধিক মনোযোগ আকর্ষণ করে তাই নবীজি সা. এভাবে বলেছেন।
-তানযীমুল আশতাত
🔶 أوضح قوله "أن تلد الأمة ربتها" (صـ ١١)
🔷 أن تلد الامة ربتها এই কথার ব্যাখ্যা:
🔹১.সবচেয়ে উত্তম এবং সুস্পষ্ট অভিমত হলো, কেয়ামতের পূর্বে দুনিয়ার এন্তেজাম ও শৃংখলা বিগড়ে যাবে। মূল শাখায় আর শাখা মূলে পরিণত হবে।
🔹২. নেতৃত্ব ও দায়-দায়িত্ব অযোগ্য ও অনুপযুক্ত ব্যক্তিদের হাতে চলে যাবে । যেমন একটি হাদীছে তা সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে। إذا وُسِّدَ الأمرُ إلى غير أهله فانتظر الساعة "যখন নেতৃত্ব অর্পণ করা হবে কোন অনুপযুক্ত ব্যক্তির নিকট, তখন তুমি কেয়ামতের অপেক্ষা করতে থাকবে।"
🔹৩. কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে দাসী ও বাদীর সন্তানাদী প্রচুর হবে। এমনকি মা আপন ছেলের বাদীর মত হয়ে যাবে। কেননা পিতার ইন্তেকালের পর সে উত্তরাধিকার সূত্রে আপন মা'র মালিক হবে।
🔹৪. এ বাক্য দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, বাদীর সন্তানরা পরবর্তীতে রাজা-বাদশাহ হয়ে যাবে। তখন অন্যদের মত তার মাও তার প্রজা হবে।
🔹৫. অবস্থার পরিবর্তন বোঝানো হয়েছে। কেয়ামতের পূর্বে এমন এক সময় আসবে যখন ব্যাপকভাবে উম্মে ওয়ালাদ ক্রয়-বিক্রয় হতে থাকবে এমনকি একদিন সন্তান তার মাকে ক্রয় করবে। কিন্তু সন্তান জানবেও না যে সে তার মাকে ক্রয় করেছে।
🔹৬. এ বাক্য দ্বারা মাতা-পিতার নাফরমানী ও অবাধ্যতার প্রতি ইংগিত করা হয়েছে। অর্থাৎ সন্তান মাতা-পিতা থেকে এমনভাবে খেদমত নিতে শুরু করবে, যেমন বান্দীদের থেকে নেয়া হয়। তাদেরকে গালি-গালাজ এবং অপমানজনক আচরণ করবে।
-তানযীমুল আশতাত
🔶 أكتب حل لغة أمارات، ربَّة، العَالَة، حُفاة
🔷 শব্দের তাহকীক:
🔹أمارات جَمْعُ أمارةٍ
☆ চিহ্ন, নিদর্শন, আলামত
🔹رَبّة ج ربَّات
☆ দাসী, প্রতিপালিকা, কর্ত্রী
🔹عالَةٌ جمْعُ عائلٍ
☆ দরিদ্র, নিঃস্ব, গরীব
🔹حُفاة جَمْعُ حافي
☆ পাদুকাবিহীন, খালিপা, নগ্নপদ
💖 ২নং হাদীস থেকে
🔶 اذكر تمييز "خمس" في قوله عليه السلام بني الإسلام على خمس.(صـ١٢)
🔷 بني الإسلام على خمس-এর মাঝে خمس-এর تمييز নির্ণয়:
🔹بني الإسلام على خمس এ বাক্যে خمس-এর তামীয হল– أركان
💖 ৩নং হাদীস থেকে
🔶 ما معنى البِضْعِ والحياءِ والحكمةِ والحسدِ
🔷 بِضْع শব্দের আভিধানিক অর্থ:
🔹ٌبِضْع শব্দটি بَضَاعةٌ থেকে নির্গত। শাব্দিক অর্থে– قطعة من الشيء অর্থাৎ কোনো কিছুর টুকরা। অতঃপর শব্দটি عدد বা সংখ্যার বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
🔷 بِضْع-এর পারিভাষিক অর্থঃ
🔹এর পারিভাষিক অর্থ নিয়ে ইমামদের মাঝে মতভেদ রয়েছে।
☆ ১. ইমাম খলীল রহ.-এর মতে, بِضْع অর্থ- সাত। যেমন– কুরআনে এসেছে
فَلَبِثَ فِي السِّجْنِ بِضْعَ سِنِيْنَ أي سَبْعَ سِنِيْنَ
অর্থাৎ হযরত ইউসুফ আ. কারাগারে ৭ বৎসর অবস্থান করেন।
☆ ২. হযরত কাতাদাহ রহ. ও আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, ৩-৯ পর্যন্ত সংখ্যাকে بِضْع বলে।
☆ ৩. ইমাম ফাররা বলেন, সাধারণত ৩-৯ পর্যন্ত বেজোড় সংখ্যার উপর بِضْع শব্দটি প্রয়োগ হয়।
☆ ৪. কারো মতে, ১-১২ পর্যন্ত সংখ্যাকে بِضْع বলে। তবে এ হাদীসে বরং সংখ্যাধিক্যই উদ্দেশ্য।
🔷 حياء শব্দটি আভিধানিক অর্থে–
حياء শব্দটি حيوة থেকে নির্গত।
🔹শাব্দিক অর্থঃ
☆ التَّغيُّرُ পরিবর্তন হওয়া।
☆ الانكسار নম্রতা
☆ الاستحياء লজ্জা করা।
☆ الانقباض সংকোচবোধ করা।
🔷 حياء-এর পারিভাষিক অর্থঃ
🔹১. ইমাম রাগেব রহ. বলেন,
هو انقباض النفس من القبيح
অর্থাৎ মন্দকর্ম হতে অন্তরের সংকোচবোধ।
🔹২. আল্লামা আইনী রহ. বলেন,
الحياء هو انحصار النفس خوف ارتكاب القبائح
অর্থাৎ মন্দ কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় আত্মাকে দমন করাই হলো হায়া।
🔹৩.ইমাম বায়যবী রহ. বলেন,
هو انقباض النفس عن القبائح مخافة الذمّ
অর্থাৎ নিন্দার ভয়ে মন্দকর্ম হতে অন্তরের সংকোচবোধ করা।
🔷 حكمة-এর পরিচয়
🔹অর্থ : ইলম এবং আমলের দ্বারা হককে সত্যায়ন করা। অথবা, দীনের হুকুম আহকামকে জানার দ্বারা হককে সত্যায়ন করার নাম হলো হেকমত।
🔷 حسد-এর পরিচয়ঃ
🔹 حسد বলা হয় অপরের যেই নিয়ামত আছে সেই নিয়ামত তার থেকে নিঃশেষ হয়ে নিজের জন্য হয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করা।
💖 ৬নং হাদীস থেকে
🔶 اذكرِ الأقوال في المراد بحلاوة الإيمان ثم بين وجه تخصيص الثلاث بالذكر
🔷 حلاوة الإيمان দ্বারা উদ্দেশ্যঃ
🔹১. মুহাদ্দিসগণ বলেন, এখানে অভ্যন্তরীণ ও আন্তরিক তৃপ্তি উদ্দেশ্য। আর প্রকৃত অর্থ হলো আল্লাহর আনুগত্যে তৃপ্তি অনুভূত হওয়া এবং আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতের মাধ্যমে অন্তরে মিষ্টির মতো তৃপ্তি অনুভূত হওয়া । 🔹২. ইমাম নববী রহ.- সহ অন্যান্য হাদীসবিশারদগণ حلاوة الإيمان দ্বারা অভ্যন্তরীণ তৃপ্তি উদ্দেশ্য নিয়েছেন। যার অর্থ ইবাদত ও রাসূল হল - এর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে খুশি মনে কষ্ট সহ্য করা এবং তাঁদের সন্তুষ্টি অর্জনকে দুনিয়ার সকল ধনদৌলতের উপর অগ্রাধিকার প্রদান করা।
🔹৩. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য যে কোনো কষ্টকর কাজ করতে বিরক্ত ও অস্থিরতা অনুভব না করা।
🔹৪. যাবতীয় কাজে মানসিক তৃপ্তি ও প্রশান্তি লাভ করা ।
🔹৫ . কাযী বায়যাবী রহ.-এর মতে, শরিয়তের অনুশাসন ও বিধি-বিধান পালন করা স্বভাবগত কষ্টকর মনে হলেও তার উপকারিতা ও প্রতিদানের প্রত্যাশায় তা যথাযথ পালনে আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ার নামই হলো- حلاوة الإيمان বা ঈমানের স্বাদ।
🔹৬. শায়খ মহিউদ্দীন ইবনুল আরাবীর মতে- حلاوة الإيمان বলতে ইবাদতে আগ্রহ বোধ করা, তৃপ্তি অনুভূত হওয়া, দীনের পথে দুঃখ কষ্ট সহ্য করার মানসিকতা সৃষ্টি হওয়া এবং জাগতিক বিষয়ের উপর দীনকে প্রাধ্যান্য দান করার মনোবৃত্তি গড়ে ওঠা।
🔷 তিনটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখের কারণ:
🔹ঈমানের প্রকৃত স্বাদ অনুভব তিনটি মৌলিক বিষয়ের উপর নির্ভরশীল।
☆ ১. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঈমানের মূল বিষয় এতেই নিহিত রয়েছে ।
☆ ২. কোনো মানুষকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা।
☆ ৩. আল্লাহ তা'আলার অনুগ্রহে মুসলমান হওয়ার পর পুনরায় কুফরিতে ফিরে যাওয়াকে ঘৃণা করা। এই মৌলিকতার দিকে লক্ষ্য রেখেই বিশেষভাবে এই তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
💖৮নং হাদীস থেকে
🔶 كم قسما للأمة وما المراد بها هنا وما وجه تخصيص اليهود والنصارى بالذكر؟ (صـ١٢)
🔷 أمة -এর প্রকারভেদঃ
🔹১. أمّة إجابة অর্থাৎ, যাদের নিকট প্রিয়নবী সা.-এর দাওয়াত পৌঁছেছে এবং তারা ঈমান ও আনয়ন করেছে, তারাই হল উম্মতে ইজাবাত।
🔹২. أمّة دعوة অর্থাৎ, যাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌছেছে কিন্তু ঈমান আনয়ন করেনি।
☆ এখানে উদ্দেশ্য উম্মতে দাওয়াহ।
🔷 ইহুদি ও খ্রিস্টান জাতিকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ :
🔹১. ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা বলত, আল্লাহ তা'আলার মনোনীত রাসুল হযরত মুসা কালিমুল্লাহ ও ঈসা রুহুল্লাহ। আমরা তাদের অনুসারী তাওরাত ও ইঞ্জিলের অনুসরণের কারণে আমরা মুক্তি পাব। তাছাড়া জান্নাত তো আমাদের সৃষ্টিগত অধিকার। এ হাদীস দ্বারা তাদের ভ্রান্ত ধর্ম বিশ্বাস খণ্ডন করা হয়েছে যে, মুহাম্মদ নবীরূপে প্রেরিত হওয়ার পূর্ববর্তী সমস্ত ধর্ম রহিত হয়ে গিয়েছে। অতএব, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা মুহাম্মদ সা. -এর প্রতি ঈমান আনয়ন না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত কখনো মুক্তি পাবে না। যখন খ্রিষ্টানদের এ অবস্থা, যাদের মর্যাদা পৌত্তলিকের অন্তরেও ছিল, তখন সমস্ত মুশরিক উত্তমরূপেই মুক্তি পাবে না।
🔹২. অথবা তাদেরকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ অধিকরূপে তাদের দুরবস্থার কথা বর্ণনা করা যে , জানা সত্ত্বেও তাদের অস্বীকৃতি নেহায়েত খারাপ।
💖 ৯নং হাদীস থেকে
🔶 ِإلَامَ يرجعُ الضميرُ في قوله: فله أجران ولم كَرَّرَ هذه الجملةَ وما سبب الأجرين لأولئك الثلاثة؟ فَصِّلْ. (صـ ١٦)
🔷 فله أجران-এর মাঝে له যমীরের مرجع নির্ণয়ঃ
🔹فله أجران -এর মাঝে له যমীরের مرجع কোন দিকে ফিরেছে এ ব্যাপারে দুটি উক্তি রয়েছে।
☆ যমীর পূর্বোক্ত প্রতিটি দলের দিকে ফিরেছে।
☆ অথবা শুধু সর্বশেষটির দিকে ফিরেছে।
🔷 فله أجران কে পুনরায় উল্লেখের কারণঃ
🔹এ হাদীসের প্রথমে ثلاثة لهم أجران বলার পর পুনরায় হাদীসের শেষে فله أجران বলার কারণ–
☆ ১. لهم أجران বলার পর দীর্ঘ আলোচনা হওয়ায় শ্রোতাকে পুনরায় মনোযোগী করার জন্য দ্বিতীয়বার তা উল্লেখ করা হয়েছে।
☆ ২. অথবা, فله أجران অংশটি দাসী সংক্রান্ত বক্তব্যের পর আনয়ন করে দাসীর প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কেননা, মানুষ দাসীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে।
☆ ৩. অথবা, "له" -এর মাঝে "ه" যমীরটি পৃথক পৃথকভাবে বর্ণিত তিন ব্যক্তির প্রত্যেকের দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়েছে এবং এর দ্বারা تاكيد করা হয়েছে।
🔷 তিন ব্যক্তির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ:
🔹তিন ব্যক্তিকে বিশিষ্ট করার কারণ: আলোচ্য হাদীসে মহানবী সা. তিন ব্যক্তিকে দ্বিগুণ হওয়াব লাভে বিশেষিত করার কারণ হলো, তারা মূল দায়িত্ব পালনের পর আরও অনেক অতিরিক্ত ও কষ্টকর কাজ স্বেচ্ছায় সম্পাদন করেছে । কাজেই তারা তাদের সমবা জীবনে যেসব পুণ্যময় কাজ করবে, যেমন- নামাজ, রোজা, হজ ইত্যাদিতে তারা বিগুণ হওয়াব লাভ করবে। যেমন- সাধারণভাবে কোনো লোক পাঁচটি ছওয়াব লাভ করলে এরা লাভ করবে তার দ্বিগুণ।
💖১০নং হাদীস থেকে
☆ عن بن عمر رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أمرت نقاتل الناس حتّی … … إلا بحق الإسلام وحسابهم على الله. (صـ١٢)
🔶 أوضح قوله عليه الصلاة والسلام "إلا بحق الإسلام وحسابهم على الله"
🔷 নবীজি সা.-এর বাণী إلا بحق الإسلام -এর ব্যাখ্যাঃ
🔹কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উপর ঈমান আনে, সামাল পড়ে ও যাকাত প্রদান করে, তাহলে সে তার জান ও মালের নিরাপত্তা লাভ করবে । কিন্তু ইসলামের বিধান মতে কোনো হক বিনষ্ট করলে, তথা শরিয়ত সম্মত কোনো শাস্তির উপযুক্ত হলে, তা হতে সে রেহাই পাবে না। যেমন- অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, ব্যভিচার করা, চুরি করা ইত্যাদির শান্তি। এ সকল ক্ষেত্রে সে শুধু মুসলমান হওয়ার কারণে শাস্তি হতে রেহাই পাবে না । বরং তার উপর حد ও قصاص জারি হবে। এটা ইসলামের হক । এক্ষেত্রে মানুষের কোনো এখতিয়ার নেই।
🔷 নবীজি সা.-এর বাণী وحسابهم على الله -এর ব্যাখ্যাঃ
🔹মৌখিক স্বীকৃতি ও বাহ্যিক কাজকর্মে ঠিক রেখে যদি কোনো ব্যক্তি তার অন্তরে নেফাকী, কুফরি ও পাপচার লুকিয়ে রাখে, তবে এর দায়িত্ব রাসূলের বা কোনো মানুষের উপর ন্যপ্ত হবে না। কেননা, তা মানুষের সাধ্যের বাইরে। তাই তার অন্তরের বিষয়াবলির দায়িত্ব কেবল মহান আল্লাহর উপরই ন্যস্ত। কেননা, তিনিই হলেন অন্তর্যামী। কাজেই আল্লাহ তার হিসাব-নিকাশ নিবেন, এ দিকে ইঙ্গিত করেই মহান আল্লাহ রাসূল সা. -কে লক্ষ্য করে বলেছেন,
ما عليك من حسابهم من شيء وما من حسابك عليهم من شيء
💖১১নং হাদীস থেকে
🔶 أوضح قوله: "فلا تُحفِرُ اللهَ في ذمته"
🔷 "তোমরা আল্লাহর দায়িত্বের ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা করো না" -এর বিশ্লেষণঃ
🔹 ذِمّة শব্দের অর্থ হলো- নিরাপত্তার দায়িত্বভার নেওয়া বা নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া। কাজেই উক্ত হাদীসাংশের অর্থ হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। একজন মানুষ যখনই আল্লাহ প্রদত্ত এবং রাসূল প্রদর্শিত জীবন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে মনে-প্রাণে মেনে নেবে তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
অন্য হাদীসে এসেছে–
من قال لا إله إلا الله عصموا مني انفسهم واموالهم الا بحق الاسلام.
💖১৪নং হাদীস থেকে
🔶 أوضح قوله: "إلا أن تطوع" وقوله: "لا أزيد على هذا ولا أنقص" (صـ١٣)
🔷 إلا أن تطوع দ্বারা উদ্দেশ্যঃ
🔹এখানে استثناء-এর মধ্যে দু'টি সম্ভাবনা রয়েছে– ১. استثناء متّصل ২. استثناء مُنْقطع
🔹ইমাম শাফেয়ী রহ. - এর মতে, এখানে استثناء টি হল مُنْقَطع তাই মূল ইবারত হবে–
إلا إن أردتَ أن تطوع فذلك لك
অর্থাৎ "তোমার উপর আর কোনো কিছু ফরজ নেই, কিন্তু যদি নফল হিসেবে আর কোনো ইবাদত করতে চাও, তবে তা তোমার ইচ্ছাধীন।" আর নফল শুরু করলে তা পরিপূর্ণ করা তোমার উপর [ওয়াজিব] আবশ্যক নয়।
💖 ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর দলীল:
☆২. নবীজি সা. কখনো কখনো নফল রোজা রেখে ভেঙ্গে ফেলতেন। যেমনটি নাসাঈর বর্ণনায় রয়েছে। শুরু করার পর পূর্ণ করা যদি ওয়াজিব হতো তাহলে তিনি কিভাবে ভাঙতে পারেন?
☆৩. জুয়াইরিয়া বিনতে হারেস রা. কে নবীজি সা. জুমার নামাজের পর রোজা ভেঙ্গে ফেলতে বলেন। যেমনটি বুখারীর বর্ণনায় এসেছে। সুতরাং নফল রোজা শুরু করার পর পূর্ণ করা যদি ওয়াজিব না হয় তাহলে অন্যান্য আমলের ক্ষেত্রেও ওয়াজিব হবে না।
☆৪. রোজার অধ্যায় বর্ণিত হয়েছে,
الصائم المتطوع أمير على نفسه
"নফল রোযাদার ব্যক্তি নিজ সত্তার উপর আমীর বা শাসনকর্তা।" অর্থাৎ তা পূর্ণ করা বা না করার স্বাধীনতা তার রয়েছে।
🔹হানাফীদের মতে, এখানে استثناء টি হল مُتّصل তাই বাক্যটির অর্থ হবে–
তোমার উপর আর কোনো ফরজ নেই; কিন্তু নফল হিসেবে কোনো কাজ শুরু করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে পড়বে।
💖 হানাফীদের দলিল:
☆১. ولا تبطلوا أعمالكم এই আয়াতে আমল শুরু করার পরা যেহেতু বাতিল করতে নিষেধ করা হয়েছে অতএব পূর্ণাঙ্গ করা ওয়াজিব হবে।
☆২. হজ্ব শুরু করার পর পূর্ণ করা ওয়াজিব। এ ব্যাপারে সকল ইমাম ঐক্যমত। তাই নষ্ট করার পর কাজা করার ব্যাপারেও সবাই একমত। হানাফীদের নিকট নামাজ-রোজা ইত্যাদি হজ্বের মতই। শুরু করার পর পূর্ণ করা ওয়াজিব এবং ভেঙ্গে ফেলার পর কাযা করাও ওয়াজিব।
☆৩. বাদাইউস্ সানাইয়ের গ্রন্থকার লিখেছেন,
وليوفوا نذورهم
"তারা যেন আপন আপন মান্নত পূরণ করে" এ আয়াতে সকল ইমাম ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, কেউ যদি আল্লাহর নাম নিয়ে মৌখিকভাবে মান্নত করে তবে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব অথচ এখনও পর্যন্ত সে তা শুরুই করেনি। সুতরাং যখন আল্লাহর নাম নিয়ে কোন ইবাদত শুরু করা হবে তখন তা উত্তমরূপে পূরণ করা ওয়াজিব হবে, আল্লাহর নামের মর্যাদা রক্ষার্থে।
-তানযীমুল আশতাত
💖 ইমাম শাফেয়ী রহ. -এর দলিল খণ্ডন:
ইমাম শাফেয়ী রহ. নিজের দাবী প্রমাণ করার জন্য استثناء কে استثناء مُنْقَطع বলেছেন, এটি মূলের পরিপন্থী। কারণ استثناء-এর আসল হল- مُتّصل হওয়া।
-ফাতহুল বারী, ফাতহুল মুলহিম
☆ ইমাম শাফেয়ী রহ. দ্বিতীয় যুক্তিতে নাসাঈর বর্ণনা এবং তৃতীয় যুক্তিতে বুখারীর বর্ণনা উল্লেখ করেছেন যেখানে নফল রোযাদার ব্যক্তির রোযা ভেঙ্গে ফেলার বিষয় উল্লেখ রয়েছে। এ ব্যাপারে আল্লামা তীবী রহ. বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, সেখানে তো ঐ সকল হাদীসও ছিলো যেগুলো দ্বারা রোযা শুরু করার পর তা পূর্ণ করা এবং ভেঙ্গে ফেলার পর পূনরায় কাযা করা ওয়াজিব প্রমাণিত হয়। যেমন–
ইমাম আহমাদ রহ. তার মসনদে আহমাদে হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন। আম্মাজান হযরত আয়শা রাযি. বলেন, আমি এবং হাফসা আমরা দুজন রোযা অবস্থায় সকাল করি। তারপর আমাদের জন্য বকরির গোস্ত হাদিয়া আসে। আমরা সেই গোশত খেয়ে রোজা ভেঙ্গে ফেলি। এরপর নবীজি সা. আগমন করেন আমরা তাঁকে রোজা ভাঙ্গার কথা বললে তিনি বলেন, তোমরা এর পরিবর্তে অন্য একদিন রোজা রাখবে। তাছাড়া নাসাঈর হাদীস রোজা রেখে ভেঙ্গে ফেলা পরবর্তীতে তা কাযা না-করা প্রমাণ করে না।
☆ তৃতীয় দলীলের উত্তরঃ
নবীজি সা. ও জুয়াইরিয়া রাযি.-এর রোজা ভেঙ্গে ফেলা কোনো ওজরের কারণে হয়েছিলো।
☆ শাফেয়ীদের হাদীসগুলো নেতিবাচক আর হানাফীদের হাদীসগুলি ইতিবাচক। হাদীসের মূলনীতি অনুযায়ী ইতিবাচক হাদীস অগ্রগণ্য হবে।
এছাড়াও ইবাদতে সতর্কতা হানাফীদের হাদীসগুলো দ্বারাই প্রমাণিত হয়। সে বিবেচনায় হানাফিদের অভিমতই অগ্রধিকার পাওয়ার যোগ্য।
☆ চতুর্থ দলীলের উত্তর:
الصائم المتطوع أمير على نفسه
"নফল রোযাদার ব্যক্তি নিজ সত্তার উপর আমীর" এ কথার মতলব– নফল ইবাদত শুরু করার পূর্বে তার স্বাধীনতা রয়েছে, ইচ্ছা করলে সে শুরু করতে পারে আবার নাও করতে পারে।
-তানযীমুল আশতাত
🔷 لا أزيد على هذا ولا أنقص দ্বারা উদ্দেশ্যঃ
☆ ১. উক্ত বাক্যে هذا এবং منه উভয়টি দ্বারা শরিয়তের ফরজ বিধানসমূহের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, তাই মূল ইবারত হবে–
لا أزيد على هذه الأمور الشرعية التي علمني رسول اللہ ﷺ ولا أنقص من الأمور الشرعية.
অর্থাৎ নবীজি সা. আমাকে শরীয়তের যে বিধানাবলি শিক্ষা দিলেন তার মধ্যে কম-বেশি করব না।
-ফাতহুল বারী
☆ ২. আল্লামা তীবী রহ. বলেন, উল্লিখিত উক্তি দ্বারা تصديق ও قبول সম্পর্কে তার স্বীকৃতি পাওয়া যায়। তাই বাক্যের মূল অর্থ হবে–
قبلتُ كلامَك قبولا فلا أزيد عليه من جهة السـؤال ولا أنقص فيه من طريق القبول
অর্থাৎ আপনার কথা আমি পূর্ণরূপে গ্রহণ করলাম কাজেই এর উপর আর কোন প্রশ্নও করবো না এবং গ্রহণ করার দিক থেকেও কম করবো না।
☆ ৩.ফাতহুল মুলহিম গ্রন্থকারের মতে তার কথার অর্থ হবে–
لا أزيد على هذا بالنوافـل ولا أنـقـص مـن الـفـرائـض
অর্থাৎ আমি এর উপর কোনো নফলকে বাড়াবোও না এবং কোনো ফরজ বিধানকে কমাবোও করব না।
☆ ৪. অথবা, এ কথাটি আগত লোকটির শরিয়তের বিধানের উপর সুদৃঢ় থাকার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে।
☆ ৫. আল্লামা ইদ্রীস কান্ধলবী রহ. বলেছেন- এর অর্থ হলো,
إن أتبع إلا ما أمرتَني به من غير تغيّر ولا تبديل
আপনি আমাকে যা আদেশ করেছেন আমি তা অনুসরণ করবো, কোনো ধরণের পরিবর্তন-পরিবর্ধন ছাড়াই।
🔶 ما معنى "متفق عليه"
🔷 متفق عليه এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্যঃ
🔹এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ হাদিস যেটা ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম রহ. উভয় বর্ণনা করেছেন।
💖১৫নং হাদীস থেকে
🔶 اكتب حل لغات: وفد، خزایا، ندامی، النقير (صـ ١٣)
🔷
🔹وَفْدٌ ج وُفُوْدٌ
☆ প্রতিনিধিদল, দূত
🔹خزايا جمعُ خزيان، مؤَنثُه خَزْيَا
☆ লজ্জিত, অপমানিত, লাঞ্চিত
🔹ندامی جمعُ ندْمان
☆ অনুতপ্ত, লজ্জিত
🔹النقير ج نُقُرٌ
☆ কাঠের পাত্র
🔶 المأمور به في الحديث خمسة فكيف قال الراوي أمرهم بأربعٍ؟ (صـ ١٣)
🔷 বর্ণনাকারী ৪টি বলার কারণঃ
🔹১. আলোচ্য হাদীসের পূর্বাপর ও الله ورسله أعلم বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায়, আগত প্রতিনিধি পূর্ব হতেই মু'মিন ছিল, তাই এখানে شهادتين মূল উদ্দেশ্য নয়; বরং বাকি চারটিই মূল উদ্দেশ্য।
🔹২. আব্দুল কায়স গোত্র মুজার গোত্রের কাফেরদের প্রতিবেশী হিসাবে বসবাস করত, এ কারণে তাদের সাথে যুদ্ধ-বিগ্রহ লাগতে পারে। ফলে গনিমতের মালও অর্জন হতে পারে। তাই মূল চারটি বিষয়কে রাসুলুল্লাহ বর্ণনা করার পর প্রয়োজনীয় হওয়ায় অতিরিক হিসাবে গনিমতের এক পঞ্চমাংশের কথা উল্লেখ করেছেন।
🔹৩. কাজী বায়যাবী রহ. বলেন , এখানে শুধু إيمان بالله একটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, আর اقامت صلوة থেকে শেষ পর্যন্ত হল ঈমানের ব্যাখ্যা। মূলত সব মিলে এখানে শুধু একটি বিষয় বর্ণিত হয়েছে। বাকি তিনটির কথা বর্ণনাকারী ভুলবশত কিংবা সংক্ষিপ্তকরণের জন্য উল্লেখ করেননি।
করেননি।
🔹৪. অথবা, "إعطاء الخمس" জাকাতের প্রকার থেকে। সুতরাং এটা বাদ দিলে চারটিই হয়।
🔹৫. অথবা, পবিত্র কুরআনে زكوة ও صلوة- এর কথা অধিকাংশ স্থানে একত্রে উল্লেখ করা হয়েছে , তাই এখানেও উভয়টা মিলে একটা হবে। সুতরাং সব মিলে চারটিই হবে।
🔹৬. আল্লামা কিরমানী রহ. বলেন, صلاة - زكاة - صوم ও إعطاء الخمس এ চারটিই নবীজি সা. উল্লেখ করেছেন। শুধু বরকতের জন্য সাথে ঈমানের কথা উল্লেখ করেছেন।
🔶 الأشهر الحرم كم هي وما هي؟ (صـ ١٣)
🔷 নিষিদ্ধ মাস কয়টি ও কী কী?
🔹أشهر الحرم-এর সংখ্যা হলো চারটি । যথা-
১.জিলকদ ২.জিলহজ
৩.মুহাররম ৪.রজব
জাহেলী যুগের লোকদের নিকট এই চারটি মাস অত্যন্ত সম্মানিত ছিল এমনকি তারা এ মাসগুলোতে যুদ্ধ বিগ্রহকে হারাম মনে করত। তাই এ মাসগুলোকে أشهر الحُرُم বা নিষিদ্ধ মাস বলা হয়।
💖১৭নং হাদীস থেকে
🔶 قوله: "فإني اريتكنّ أكثر أهل النار" كيف أُرِىَ النبيُّ صلى الله عليه وسلم ولماذا خص النبي صلى الله عليه وسلم كثرة اللعنة وكفران العشيره بالذكر (صـ١٣)
🔷 নবীজি সা. কিভাবে নারীদেরকে জাহান্নামে দেখলেন?
🔹১. كشف- এর মাধ্যমে দেখানো হয়েছে।
🔹২. ওহীর মাধ্যমে দেখানো হয়েছে ।
🔹৩. মে'রাজ রজনীতে যখন রাসূলকে বেহেশত-দোযখ ভ্রমণ করানো হয়েছিল, তখন দেখানো হয়েছে। দোযখ উপস্থাপন করা হয়েছিল, তখন দেখানো হয়েছে
🔹৪. সর্বাপেক্ষা অগ্রাধিকার যোগ্য মতামত হলো, সালাতুল কুসুফের মধ্যে মসজিদে কিবলার দিকে দেয়ালের মধ্যে যখন বেহেশত-দোযখ উপস্থাপন করা হয়েছিল তখন দেখানো হয়েছে।
🔷 لعنة ও كفران العشيرة কে বিশেষভাবে উল্লেখের কারণঃ
🔹উক্ত হাদীসে অন্যান্য পাপের কথা উল্লেখ না করে শুধু لعنة ও كفران العشير- কে খাস করে উল্লেখ করার কারণ হলো–
☆ ১. উভয়টি হল বান্দার হকের অর্ন্তভূক্ত।
☆ ২. জবানের কারণেই অধিকাংশ মানুষ দোযখে যাবে। যেমন হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
هل يُكِبّ الناس في النار على وجوههم الا حصائد السنتهم
মানুষকে কেবল মুখের কারণেই নিম্নমুখী করে জাহান্নামে ফেলা হবে।
☆ ৩.আর كفران العشير কে খাস করে উল্লেখ করার কারণ হলো, হাদীস শরীফে আছে,
لو كنت أمرت أحدا أن يسجد لأحد لأمرتُ المرأة أنْ تسجد لزوجها.
আমি যদি কাউকে সেজদা করার নির্দেশ দিতাম তাহলে নারীদেরকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সেজদা করতে।
কাজেই স্বামীর অবাধ্যতা ও অকৃতজ্ঞতা হবে অত্যন্ত কঠিন অপরাধ। হাদীসে এই ইঙ্গিতও রয়েছে যে, স্ত্রী যখন স্বামীর হক আদায়ে অবহেলা করবে; তখন সে আল্লাহর হক আদায়েও অবহেলা করবে।
-দরসে মেশকাত
💖১৯নং হাদীস থেকে
🔶 أوضح قوله تعالى "وأنا الدهر" (صـ١٣)
🔷 أنا الدهر 'আমিই সময়কাল' -এর মতলব কী? এ নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে।
🔹 ইমাম রাগিব ইস্পাহানি রহ. বলেন,
কালের ভালো-মন্দ সুখ-দুঃখ যা কিছু ঘটে তা আমিই করে থাকি। এসব কাজে কালের কোন দখল বা ক্ষমতা নেই তাই কালকে গালমন্দ করা মানে আমাকেই গালমন্দ করা।
🔹এখানে মুজাফ উহ্য রয়েছে। যেমন–
أنا خالق الدهر، انا مُقلِّبُ الدهر، انا مُصرِّف الدهر
-মিরকাত, দরসে মেশকাত
🔹 কেউ কেউ বলেন دَهْرٌ হল আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম তথা أسماء الحسنی এর অন্তর্ভুক্ত।
☆ عن أبـي مـوسـى الأشعري ( رضـ ) قال قال رسول اللہ ﷺ ما أحد أصبر على أذى يسمعه من الله يدعون له الولد ثمّ يعافيهم ويرزقهم متفق عليه.
💖২০নং হাদীস থেকে
🔶 اذكر متعلّق "من" في قوله : "أصبر على أذى يسمعه من الله" (صـ١٣)
🔷 أصبر على أذى يسمعه من الله-এর متعلّق নির্ণয়:
🔹أصبر على أذى يسمعه من الله এ বাক্যে من-শব্দের متعلّق হল أصبر শব্দটি।
💖২৩নং হাদীস থেকে
🔶 أوضح قوله: عليه السلام "على رَغْمِ أنفِ أبي ذَرٍّ" (صـ١٤)
🔷 رَغْمِ أنفِ أبي ذَرٍّ-এর ব্যাখ্যা।
🔹رغم শব্দের অর্থ হলো - ধুলায় মলিন হওয়া বা ধুলায় ধূসরিত হওয়া। ফলে, رَغْمِ أنفِ أبي ذَرٍّ - এর অর্থ হলো- আবূ যরের নাক ধূলায় ধুসরিত হোক। এটি একটি আরবি বাগধারা। এখানে রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে; মূল অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। অপছন্দ করা বুঝানো হয়েছে। তখন বাক্যটির মূল অর্থ হবে- হযরত আবূ যর রা. অপছন্দ করলেও কালিমার স্বীকৃতিদাতা ব্যক্তিটি জান্নাতে প্রবেশ করবে।
💖২৪নং হাদীস থেকে
🔶أوضح قوله : "وكلمته ألقاها إلى مريم وروح منه" (صـ١٤)
🔷 হযরত ঈসা আ. -কে كلمة الله বলার কারণ:
🔹১.এখানে كلمة শব্দের অর্থ দলিল বা প্রমাণ। এটাকে হযরত ঈসা আ.- এর প্রতি ব্যবহার করার কারণ হল তিনি ছিলেন মহান আল্লাহর অসীম কুদরতের জ্বলন্ত প্রমাণ যে, আল্লাহ তা'আলা পিতা ছাড়াও সন্তান সৃষ্টি করতে পারেন। এই হিসেবে তাকে كلمة বলা হয়েছে।
🔹২. অথবা, মহান আল্লাহ তা'আলা অসংখ্য বস্তুকে শুধু كُنْ শব্দ দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। এরূপ হযরত ঈসা আ.- কেও হযরত মারইয়ামের পেটে ঐ كُنْ শব্দ দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।
🔹৩. অথবা, হযরত ঈসা আ. -এর কালাম বা বাণী দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়েছে, তাই তাকে كلمة বলা হয়েছে।
🔹৪. অথবা, হযরত ঈসা আ. - এর মুখ থেকে বাল্য বয়সেই এ কালিমা তথা-
إنّي عَبْدُ الله বের হয়েছিল তাই তাকে كلمة বলা হয়।
🔷 روح منه বলার কারণ:
🔹১. হযরত ঈসা আ.- এর সম্মানার্থে তাঁকে روح منه বলা হয়েছে।
🔹২. অথবা, রূহ দ্বারা যেমনিভাবে মৃত জীবিত হয়ে যায় তেমনিভাবে তাঁর ফুঁকের বরকতে মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে যেত, তাই তাঁকে روح বলা হয়েছে।
🔹৩. কিংবা রূহুল আমীন হযরত জিবরাঈল আ. -কে আল্লাহ তা'আলা হযরত মারইয়াম আ. -এর নিকট প্রেরণ করেছেন এবং তিনি হযরত মারইয়ামের গলায় বা জামার অস্তিনে ফুঁক দিয়েছিলেন, তা হতে তিনি জন্মলাভ করেন। এ জন্যই তাকে রূহু বলা হয় ।
🔹৪. অথবা, হযরত ঈসা আ. -এর মাধ্যমে হৃদয়সমূহে রূহ আসত, অর্থাৎ তিনি ঈমান ও হিদায়াত দ্বারা মৃত হৃদয়কে জীবিত করতেন। এসব কারণে তাঁকে روح বলা হয়েছে।
0 Comments