![]() |
মুকাদ্দামা ১ম অংশ |
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله نَحْمده ونستعينه ونستغفره، ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا، من يهده الله فلا مُضِلَّ له، ومن يُضلِلْ فلا هادِيَ له.
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা'আলার জন্য। আমরা তাঁরই প্রশংসা করছি, তাঁরই সাহায্য চাচ্ছি এবং তাঁরই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমরা আমাদের অন্তরের যাবতীয় কুমন্ত্রণা ও অন্যায় কর্মসমূহ হতে তাঁরই নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আল্লাহ তায়ালা যাকে হেদায়েত করেন, কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন কেউ তাকে হেদায়েত দিতে পারে না।
وأشهد أن لا إله إلا الله شهادةً تكون للنجاة وسيلةً، و لرفع الدرجات كفيلةً، وأشهد أن محمدا عبدُه ورسولُه،
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। এই সাক্ষ্যই আমার নাজাতের উপায় এবং মর্যাদা বৃদ্ধির মাধ্যম হবে। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ সা. আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।
الَّذِي بَعثه وَطرقُ الْإِيمَانِ قَدْ عَفَتْ آثَارُهَا، وَخَبَتْ أَنْوَارُهَا، وَوَهَنَتْ أَرْكَانهَا، وَجُهِلَ مَكَانُهَا،
আল্লাহ তা’আলা যাকে এমন সময় [পৃথিবীতে] পাঠিয়েছেন, যখন ঈমানের পথের নিশানাগুলো মুছে গিয়েছিল, তার আলোসমূহ নিভে গিয়েছিল, তার স্তম্ভসমূহ দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং সে সবের স্থানগুলোও অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
فشيَّد ۔ صلوَات الله وسلامُه عَلَيْهِ ۔ من معالمها مَا عَفا،
অতঃপর তিনি (সা.) এসে সেই নিশানাগুলোকে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করলেন, যেগুলো (ইতঃপূর্বে) মুছে গিয়েছিল।
وشفى من العليل فِي تَأْئيدِ كَلِمَةِ التَّوْحِيدِ مَنْ كَانَ عَلٰى شفا،
আর যারা গুমরাহীর রোগে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল তাদেরকে তিনি সা. তাওহীদের কালিমার সাহায্যে আরোগ্য করলেন।
وأوضح سَبِيلَ الهدايةِ لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يَسْلُكَهَا، وَأَظْهَرَ كُنُوزَ السَّعَادَةِ لِمَنْ قَصَدَ أَنْ يَمْلِكَهَا
তাদের জন্য তিনি হেদায়েতের পথ স্পষ্ট করে দিলেন যারা তা (হেদায়েতের পথ) অনুসরণ করতে চেয়েছিল। আর তাদের জন্য তিনি (সা.) সৌভাগ্যের ভান্ডার উন্মুক্ত করে দিলেন, যারা তার অধিকারী হতে চেয়েছিল।
أما بعد؛ فإنَّ التَمَسُّكَ بهديه لا يستتبّ إلا بالاِقتفاء لما صدر من مشْكاته، والاعتصامَ بحبل الله لا يَتِمُّ إلا ببيان كشفه،
অতঃপর নিশ্চয়ই নবীজি সা.-এর আদর্শকে আঁকড়ে ধরাটা যথার্থ হবে না
তাঁর আলোকদান (বক্ষ) থেকে উৎসারিত বিষয়াবলীর অনুসরণ ব্যতীত।
এবং আল্লাহর রজ্জু তথা কুরআনকে মজবুত করে ধারণ করা পরিপূর্ণ হবে না তাঁর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ব্যতীত।
وكان «كتاب المصابيح» - الذي صنَّفَه الإمامُ مُحْيِيُ السنة ، قامع البدعة ، أبو محمد الحسين بن مسعود الفراء البغوي ، رفع الله درجته - أجمع كتاب صُنِّفَ في بابه ، وأضبط لشوارد الأحاديث و أوابدها.
”মাসা-বীহ” নামক গ্রন্থ যেটি ইমাম মুহিউস্ সুন্নাহ্, কামিউল বিদআ (বেদআত নির্মূলকারী) আবূ মুহাম্মাদ হুসাইন ইবনে মাস্'ঊদ ফাররা বাগাবী রহ. (আল্লাহ তায়ালা তাঁর মর্যাদা উঁচু করুন) রচনা করেছেন সেটি হাদীস বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ এবং বিক্ষিপ্ত ও বিরল হাদীসসমূহকে অন্তর্ভুক্তকারী একটি গ্রন্থ।
ولما سلك - رضي الله عنه - طريق الاختصار ، وحذف الأسانيد ؛ تكلم فيه بعض النُقَّاد ، وإن كان نقله - وإنه من الثقات - كالإسناد ، لكن ليس ما فيه أعلام كالأغفال ،
গ্রন্থকার যখন সংক্ষিপ্ততার পথ অবলম্বন করলেন এবং সনদসমূহকে বিলুপ্ত করে দিলেন। তখন কতিপয় সমালোচক এর সমালোচনা করেন। যদিও -তিনি আস্থাভাজন হওয়ার কারণে- তার সংকলনই সনদ সমতুল্য। তবু সনদবিহীন গ্রন্থ সনদবিশিষ্ট গ্রন্থের মতো নয়।
فاسْتَخَرْتُ الله تعالى، واستوقفتُ منه، فأَعلمتُ ما أغفله ، فأَودعتُ كلَّ حديثٍ مِنه في مقرِّه.
তাই আল্লাহর নিকট সঠিক দিক-নির্দেশনা প্রার্থনা করলাম এবং তাঁর কাছে তৌফিক চাইলাম। অতঃপর তিনি (ইমাম বাগাবী রহ.) যে হাদীসগুলো সনদবিহীন অবস্থায় উল্লেখ করেছেন আমি সে হাদীসগুলোতে সনদ তথা সাহাবীদের নাম যুক্ত করেছি এবং তার [মাসাবীহ-এর] প্রতিটি হাদীসকে যথাস্থানে রেখেছি।
كما رواه الأئمة المُتقنون، والثقات الراسخون؛
যেমনিভাবে বর্ণনা করেছেন দক্ষ ও বিশ্বস্ত ইমামগণ
مثل أبي عبد الله محمد بن إسماعيل البخاري، وأبي الحسين مسلم بن الحجاج القشيري ،
وأبي عبد الله مالك بن أنس الأصبحي ،
وأبي عبد الله محمد بن إدريس الشافعي ،
وأبي عبد الله أحمد بن محمد بن حنبل الشيباني ، وأبي عيسى محمد بن عيسى الترمذي ،
وأبي داود سليمان بن الأشعث السجستاني ،
وأبي عبد الرحمن أحمد بن شعيب النسائي ،
وأبي عبد الله محمد بن يزيد بن ماجه القزويني ، وأبي محمد عبد الله بن عبد الرحمن الدارمي ، وأبي الحسن علي بن عمر الدارقطني ،
وأبي بكر أحمد بن الحسين البيهقي ،
وأبي الحسن رزين بن معاوية العبدري، وغيرهم وقليل ما هو.
যেমন–
১.আবূ আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী,
২.আবুল হাসান মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ আল কুশায়রী,
৩.আবূ আবদুল্লাহ মালিক ইবনে আনাস আল আসবাহী,
৪.আবূ আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইদ্রীস আশ্ শাফেয়ী,
৫.আবূ আবদুল্লাহ আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে হাম্বাল আশ্ শায়বানী,
৬.আবূ ঈসা মুহাম্মাদ ইবনে ঈসা আত্ তিরমিযী,
৭.আবূ দাঊদ সুলায়মান ইবনে আশ্'আস আস্ সিজিস্তানী,
৮.আবূ আবদুর রহমান আহমাদ ইবনে শোয়াইব আন্ নাসায়ী,
৯.আবূ আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াযীদ ইবনু মাজাহ্ আল্ কাযবিনী,
১০.আবূ মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান আদ্ দারিমী,
১১.আবুল হাসান আলী ইবনে উমার আদ্ দারাকুত্বনী,
১২.আবূ বাকর আহমাদ ইবনে হোসাইন আল বায়হাক্বী,
১৩. আবুল হাসান রযীন ইবনে মু'আবিয়া আল-আবদারী (রহিমাহুমুল্লাহ) প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ। এ ছাড়াও আরো বর্ণনাকারী রয়েছেন। তবে তাদের স্যাংখ্যা অল্প।
وإني إذا نسبتُ الحديث إليهم كأني أسندت إلى النبي صلى الله عليه وسلم؛ لأنهم قد فرغوا منه، وأغْنونا عنه.
সুতরাং আমি যখন কোন হাদীসের নিসবত এ সকল ইমামগণের দিকে করেছি তখন মনে করতে হবে আমি নবীজি সা. পর্যন্ত হাদীসের পূর্ণ সনদ বর্ণনা করছি। কারণ, তাঁরা তাঁদের কিতাবে উক্ত (পূর্ণ সনদ বর্ণনা করার) কাজ সুসম্পন্ন করে এর দায়িত্ব থেকে আমাদেরকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
وسردتُ الكتب والأبواب كما سردها، واقتفيتُ أثره فيها، وقسمت كل باب غالبا على فصول ثلاثة
আর আমি পর্ব এবং অধ্যায়সমূহকে সেভাবেই সাজিয়েছি যেভাবে তিনি (মাসা-বীহ গ্রন্থকার) সাজিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে আমি তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি। আর আমি প্রায় প্রতিটি অধ্যায়কে তিনটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত করেছি।
أولها : ما أخرج الشيخان أو أحدهما، واكتفيت بهما وإن اشترك فيه الغير؛ لعلوّ درجتهما في الرواية.
প্রথম পরিচ্ছেদ: [এতে সেসব হাদীস সন্নিবেশিত করেছি] যা ইমাম বুখারী ও মুসলিম অথবা তাঁদের কোনো একজন বর্ণনা করেছেন। কেবল তাঁদের দু'জনের নাম উল্লেখ করাটাকেই আমি যথেষ্ট মনে করেছি। যদিও সে সকল হাদীস বর্ণনায় অন্যরাও শরীক রয়েছেন। বর্ণনার ক্ষেত্রে তাঁদের দু'জনের মর্যাদা সুউচ্চ হওয়ার কারণে।
وثانيها : ما أورده غيرهما من الأئمة المذكورين،
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: [এতে রয়েছে] ঐ সকল হাদীস যেগুলো বর্ণনা করেছেন বুখারী-মুসলিম ব্যতীত উল্লিখিত অন্যান্য ইমামগণ।
وثالثها : ما اشتمل على معنى الباب من ملحقات مناسِبة مع محافظة على الشريطة، وإن كان مأثورا عن السلف والخلف.
তৃতীয় পরিচ্ছেদ: শর্তের প্রতি লক্ষ্য রেখে আলোচ্য অধ্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু নতুন হাদীস বর্ণনা করেছি। যদিও এর কিছু পূর্ববর্তী [সাহাবী] এবং পরবর্তীদের [তাবেয়ীদের] থেকে বর্ণিত।
0 Comments