উত্তরপত্র। সহীহ বুখারী ২য় খণ্ড। কেন্দ্রীয় পরীক্ষা : ১৪৪০ হিজরি/২০১৯ ইং

السؤال الأول

باب غزوة الخندق وَهِيَ الْأَحْزَابُ: قَالَ مُوسَى بْنُ عُقْبَةَ: «كَانَتْ فِي شَوَّالٍ سَنَةَ أَرْبَع» * حَدَّثَنَا أَبُو مَعْمَرٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ، عَنْ عَبْدِ العَزِيزِ، عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: جَعَلَ المُهَاجِرُونَ وَالْأَنْصَارُ يَحْفِرُونَ الخندق حَوْلَ الْمَدِينَةِ، وَيَنْقُلُونَ التُّرَابَ عَلَى مُتُونِهِمْ، وَهُمْ يَقُولُونَ نَحْنُ الَّذِينَ بَايَعُوا مُحَمَّدًا ☆ عَلَى الْإِسْلَامِ مَا بَقِينَا

أَبَدًا قَالَ: يَقُولُ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهُوَ يُجِيبُهُمْ

«اللَّهُمَّ إِنَّهُ لَا خَيْرَ ﺇِﻻَّ ﺧَﻴْﺮُ اﻵﺧِﺮَﻩْ ☆ فَبَارِكْ فِي الْأَنْصَارِ وَالْمُهَاجِرَهْ»

قالَ: يُؤْتَوْنَ بِمِلْءِ كَفِي مِنَ الشَّعِيرِ، فَيُصْنَعُ لَهُمْ بِإِهَالَةٍ سَنِخَةٍ، تُوضَعُ بَيْنَ يَدَيِ الْقَوْمِ، وَالْقَوْمُ جِيَاعٌ، وَهِيَ بَشِعَةٌ فِي الحَلْقِ، وَلَهَا رِيحٌ مُنْتِنٌ.

صفحة نمبر : ٥٨٨ حديث نمبر :

------------------

(أ) شكل وترجم مع بيان معنى الخندق والأحزاب 

(ب) أكتب واقعة غزوة الخندق مع بيان ثمرتها. 

(ج) ما هي الأقوال في سنة غزوة الخندق وما هو الراجح؟

(د) من أشار لِحفر الخندق وما كان طوله وعرضه وعمقه؟

--------------------------------------------

প্রশ্ন

(أ) شكل وترجم مع بيان معنى الخندق والأحزاب.

(أ) ইবারতে হরকত লাগিয়ে অনুবাদ কর। خندق ও أحزاب শব্দ দুটির বিশ্লেষণ কর। 


উত্তর

অনুবাদ 

পরিচ্ছেদ : খন্দকের যুদ্ধের অপর নাম আহযাব যুদ্ধ। হযরত মূসা ইবনে উকবা (র.) বলেন, ৪র্থ হিজরির শাওয়াল মাসে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।

হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের প্রাক্কালে আনসার ও মুহাজিরগণ মদিনার চার পাশে পরিখা খনন কালে পিঠে করে মাটি বহন করছিলেন এবং আবৃত্তি করছিলেন,

نَحْنُ الَّذِينَ بَايَعُوا مُحَمَّدًا ☆ عَلَى الْإِسْلَامِ مَا بَقِينَا أَبَدًا

'আমরা তো সেসব লোক যারা মুহাম্মাদ সা.-এর হাতে সারা জীবন ইসলামের উপর কায়েম থাকার ও ইসলামের জন্য জিহাদ করার বাই'আত গ্রহণ করেছি। তাদের এ কথার জবাবে নবী করীমও বলতেন,

اللَّهُمَّ إِنَّهُ لَا خَيْرَ ﺇِﻻَّ ﺧَﻴْﺮُ اﻵﺧِﺮَﻩْ ☆ فَبَارِكْ فِي الْأَنْصَارِ وَالْمُهَاجِرَهْ

'হে আলাহ! আখেরাতের কল্যাণ ছাড়া আর কোনো কল্যাণই নেই। তাই আনসার ও মুহাজিরদেরকে কল্যাণ ও বরকত দান কর। 

হযরত আনাস রা. বলেন, (পরিখা খননের সেই কঠোর পরিশ্রমের সময়) তাদেরকে দেওয়া হতো দু'মুঠো যব। সেটা দুর্গন্ধযুক্ত তেলে পাকানো হতো। অতঃপর লোকজনকে তা পরিবেশন করা হতো আর তারা থাকতেন ক্ষুধার্ত। সেগুলো গলাধঃকরণ ছিল কষ্টকর। সাথে তা থেকে দুর্গন্ধ বের হতো। 

-[মূল কিতাব : ৫৮৮]


☆ خندق ও أحزاب শব্দ দুটির বিশ্লেষণ:

🔹خند : শব্দটি ফারসি كُنْدة বা كُنْدَك শব্দের আরবিরূপ। যার অর্থ- পরিখা। যেহেতু মদিনার হেফাজতের জন্য হুযূর সা.-এর নির্দেশে মদিনার চতুর্দিকে পরিখা (খন্দক) খনন করা হয়েছিল, তাই একে খন্দকের যুদ্ধ বলা হয়। ইবনে হিশাম বলেন, হযরত সালমান ফারসী (রা.)-এর পরামর্শে পারস্যদের পদ্ধতি অনুসরণে খন্দক খনন করা হয়েছিল। 

-(উমদাতুল কারী)


🔹 أحزاب শব্দটি حِزْبٌ-এর বহুবচন। যার অর্থ জামাত বা দল। এ যুদ্ধে কাফেরদের অনেকগুলো দল ও গোত্র সম্মিলিতভাবে মুসলমানদেরকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে মদিনার উপর আক্রমণ করে। এজন্য এ যুদ্ধকে غزوة الأحزاب বলা হয়।

-[ফাতহুল বারী]

প্রশ্ন

(ب) أكتب واقعة غزوة الخندق مع بيان ثمرتها. 

(ب) খন্দকের যুদ্ধের ঘটনা ও ফলাফল বর্ণনা কর।

উত্তর

☆ খন্দক যুদ্ধের বিবরণ:

খন্দকের যুদ্ধের সময়কাল : ঐতিহাসিক খন্দকের যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়, এ ব্যাপারে কয়েকটি অভিমত পাওয়া যায়। যেমন-

১. ইমাম বুখারী (র.) বলেন, হিজরি চতুর্থ সনের শেষদিকে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। 

২. মূসা ইবনে ওকবা বলেন, খন্দক যুদ্ধ চতুর্থ হিজরির শাওয়াল মাসে সংঘটিত হয়েছে।

৩. ইবনে হাজার আসকালানী (র.) সহ অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, হিজরি পঞ্চম সনের শাওয়াল 

মাসে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

8. ইবনে সা'দ বলেন, হিজরি পঞ্চম সনের যিলকদ মাসের ৯ তারিখ সোমবার এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

৫. ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, পঞ্চম হিজরির শাওয়াল মাস মোতাবেক ৬২৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ মার্চ এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। পঞ্চম হিজরি সনের অভিমতই অধিক বিশুদ্ধ


☆ সংক্ষিপ্ত ঘটনাপ্রবাহ :

🔹 যুদ্ধ প্রস্তুতি : 

হিজরি পঞ্চম সন মোতাবেক ৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে মদিনা হতে বহিষ্কৃত বনু নযীর গোত্রসহ আবূ সুফিয়ান ১০ হাজার পদাতিক সৈন্য এবং ৬০০ অশ্বারোহী নিয়ে মদিনা অবরোধ করার লক্ষ্যে খন্দকের প্রান্তরে উপস্থিত হয়।


🔹পরিখা খনন:

আসন্ন বিপদ সম্পর্কে অবগতি লাভ করে রাসূল অভিজ্ঞ সাহাবী সালমান ফারসী (র.)-এর পরামর্শক্রমে মদিনার চারদিকে পরিখা খনন করে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করেন। এতে রাসূল নিজেও অংশগ্রহণ করেন। ৩০০০ সাহাবী ১৫/২০/২৪ দিনে পরিখা খনন সমাপ্ত করেন। অতঃপর মহিলা ও শিশুদেরকে নিরাপদ দূর্গে আশ্রয় প্রদান করা হয়। এরপর সৈন্যবাহিনীকে বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত করে নগর রক্ষার প্রহরায় নিযুক্ত করা হয়। অবশেষে ৬২৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ মার্চ এ যুদ্ধ শুরু হয়।


🔹মদিনা অবরোধ:

পরিখা অতিক্রম করে হামলা চালাতে ব্যর্থ হয়ে কাফেররা ২৭ দিন মদিনা অবরোধ করে রাখে। অবশেষে আল্লাহর পক্ষ হতে আসা মারাত্মক খাদ্যাভাব ও প্রচণ্ড ঝড়, বৃষ্টি, সর্বোপরি হযরত আলী (রা.)-এর বীরত্বের কাছে তারা চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে মদিনা হতে মক্কার দিকে পলায়ন করে। যেমন- আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَاءَتْكُمْ جُنُودٌ فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيحًا وَجُنُودًا لَمْ تَرَوْهَا ۚ وَكَانَ اللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرًا

-সূরা আহযাব, ৯


মুসলমানদের ঈমানী শক্তি বৃদ্ধি : মহান আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,

وَلَمَّا رَأَى الْمُؤْمِنُونَ الْأَحْزَابَ قَالُوا هَٰذَا مَا وَعَدَنَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَصَدَقَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ۚ وَمَا زَادَهُمْ إِلَّا إِيمَانًا وَتَسْلِيمًا

-সূরা আহযাব, ২২


🔹মহানবী সা.-এর উদারতা:

খন্দকের যুদ্ধে মহানবী সা.-এর উদারতার প্রকাশ ঘটে। এ যুদ্ধে পরিখা খননের সময় অন্যদের মতো মহানবী নিজেও মাটি বহন করেছিলেন। পরিশেষে বলবো, খন্দকের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী যুদ্ধ। এ যুদ্ধে সম্মিলিত কুফরশক্তি চরমভাবে পরাজিত ও লাঞ্ছিত হয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। আর মহানবী বিজয়ী বেশে বিশ্বের বুকে ইসলামের অমিয় বাণী ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন।


☆ যুদ্ধের ফলাফল:

🔹১. অহংকারের পতন : এ যুদ্ধে আল্লাহ তা'আলা কুরাইশদের সকল অহংকার পদদলিত করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন- إنه لا يحب المستكبرين অর্থাৎ, আল্লাহ অহংকারীদের ভালোবাসেন না । 


🔹২. কুরাইশদের ভরাডুবি : ঐতিহাসিক খোদাবখশ বলেন, খন্দকের যুদ্ধে কুরাইশদের শক্তি ক্ষুণ্ণ হয় এবং মুসলমানদের শক্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এ যুদ্ধে কুরাইশদের সামরিক ও নৈতিক শক্তির চরম দুর্বলতা প্রকাশ পায়।


🔹৩. মহানবী সা.-কে নেতা হিসেবে স্বীকৃতি : এ যুদ্ধে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা মহানবী -এর রণকৌশল প্রত্যক্ষ করে। তাঁকে নেতা হিসেবে মেনে নিয়ে দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করে।


🔹৪. ইলাহী শক্তি অপরাজেয় প্রমাণিত : এ যুদ্ধে বিশ্বাস, শৃঙ্খলা, আত্মত্যাগ ও ইলাহী বলে বলীয়ান মুসলিম শক্তি যে অপ্রতিরোধ ও অপরাজেয়, তা-ই প্রমাণিত হয়।


🔹৫. ইহুদিদের বহিষ্কার : ড. এস. এম ইমামুদ্দিন বলেন, বিশ্বাসঘাতক ইহুদিদেরকে মদিনা থেকে বহিষ্কৃত হতে হয়, ফলে মদিন রাষ্ট্র ষড়যন্ত্রমুক্ত হয়ে ওঠে। 


🔹৬. ত্রয়ী শক্তিতে ভাঙ্গন : ঐতিহাসিক হিট্টি বলেন, এ যুদ্ধের মাধ্যমে ত্রয়ী শক্তির ঐক্যের দূর্গে ফাটল ধরে। ফলে মদিনার ইসলাি রাষ্ট্রের ভিত্তি সুদৃঢ় হয়।


🔹৭. মুনাফিক চিহ্নিত : খন্দকের যুদ্ধের মাধ্যমে মদিনায় কারা মুনাফিক ছিল, তা চিহ্নিত হয়ে যায়।


🔹৮. ইসলামের বিজয় খন্দকের যুদ্ধের পর ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং দ্রুত প্রসার লাভ করে। 


🔹৯. প্রতিশোধ গ্রহণ : এ যুদ্ধে বিজয় লাভের মাধ্যমে মুসলমানগণ উহুদ যুদ্ধের পরাজয়ের গ্লানি মুছতে সক্ষম হয়।


প্রশ্ন

(ج) ما هي الأقوال في سنة غزوة الخندق وما هو الراجح؟

(ج) খন্দক যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয় এ ব্যাপারে মতামত কি? এবং প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত কোনটি? 

উত্তর

☆ খন্দক যুদ্ধের সময়কাল:

 ঐতিহাসিক খন্দকের যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়, এ ব্যাপারে কয়েকটি অভিমত পাওয়া যায়। যেমন–


১. ইমাম বুখারী (র.) বলেন, হিজরি চতুর্থ সনের শেষদিকে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

২. মূসা ইবনে ওকবা বলেন, খন্দক যুদ্ধ চতুর্থ হিজরির শাওয়াল মাসে সংঘটিত হয়েছে।

৩. ইবনে হাজার আসকালানীসহ অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, পঞ্চম হিজরি শাওয়াল মাসে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

৪. ইবনে সাদ বলেন, পঞ্চম হিজরি যিলকদ মাসের ৯ তারিখ সোমবার এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

৫. ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, পঞ্চম হিজরি শাওয়াল মাস মোতাবেক ৬২৭ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মার্চ এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সর্বশেষে বলা যায়, পঞ্চম হিজরি অভিমতই অধিক বিশুদ্ধ।


প্রশ্ন

(د) من أشار لِحفر الخندق وما كان طوله وعرضه وعمقه؟

(د) পরিখা খননের পরামর্শ কে দিয়েছিলেন? এবং তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা কতটুকু ছিল? 

উত্তর

☆ পরিখা খননের পরামর্শ দিয়েছেন হযরত সালমান ফারসী (রা.)। 

☆ দৈর্ঘ্যের পরিমাণ : পরিখার দৈর্ঘ্যের পরিমাণ ছিল ১২ কিলোমিটার। 

☆ গ্রন্থের পরিমাণ ৫ মিটার। আবার কোথাও কোথাও ১০ বা ১২ মিটারও ছিল।

☆ গভীরতা: পরিখার গভীরতা ছিল ৫ মিটার।


Post a Comment

0 Comments