দন্ত্য-ন ও মূর্ধন্য-ণ এর ব‍্যবহার


দন্ত্য-ন ও মূর্ধন্য-ণ এর ব‍্যবহার

দন্ত্য-ন ও মূর্ধন্য-ণ (ন/ণ )

বাংলা ভাষায় এমন কিছু বর্ণ আছে যেগুলো উচ্চারণে এক মনে হলেও লেখার ক্ষেত্রে এক নয়। এধরণের দুটি বর্ণ হলো দন্ত‍্য-ন মূর্ধন্য-ণ। কোনটি লিখব? চিন্তায় পড়ে যাই। কিছু শব্দ অধিক ব্যবহারের ফলে চোখে ভাসে, মুখস্থের উপর লিখতে পারি। কিন্তু এভাবে সবগুলো শব্দের শুদ্ধ বানান মনে রাখা তো অসম্ভব নয়। কিছু নিয়ম জানা থাকলে আমরা এ ধরণের ভুল থেকে বাঁচতে পারি।

পুরো লেখাটি মনোযোগসহ পড়লে আশা করি উপকৃত হবেন।

ন্ত্য-ন ও মূর্ধন্য-ণ -এর ব‍্যবহার

১. 'র'-গুচ্ছ' (অর্থাৎ র, ঋ, রেফ ও র-ফলা) এবং 'ষ' -এর পরে 'ণ' হয়।

যেমন–

☆ চরণ, বরণ, মরণ, হরণ, করণ, কারণ, কিরণ ইত্যাদি। 


☆ ঋণ, ঘৃণা, তৃণ, মসৃণ ইত্যাদি। 


☆ বর্ণ, কর্ণ, চূর্ণ, পূর্ণ, জীর্ণ, অর্পণ, নির্মাণ, অনির্বাণ ইত্যাদি। 


☆ প্রাণ, ত্রাণ, ঘ্রাণ ইত্যাদি ।


☆ ভাষণ, ভীষণ, তোষণ, দোষণ, 

চোষণ ইত্যাদি।


২.যদি 'র'-গুচ্ছ' ও 'ন' এর মাঝে স্বরবর্ণ থেকে প-বর্গ (প-ফ-ব-ভ-ম) এবং ‘য়’ ও ‘হ’ এগুলো থেকে কোন বর্ণ হয় তাহলে মূর্ধন্য-ণ হবে।


যেমন– রোপণ, কৃপণ, প্রবীণ, রমণী, ন্যায়পরায়ণ, গ্রহণ, ভ্রমণ, প্রমাণ, , গ্রামীণ।


৩.যদি 'র'-গুচ্ছ' ও 'ন' এর মাঝে স্বরবর্ণ থেকে প-বর্গ (প-ফ-ব-ভ-ম) এবং ‘য়’ ও ‘হ’ ছাড়া অন্য কোন বর্ণ হয় তাহলে দন্ত্য-ন হবে।

যেমন–

☆ রচনা, রসনা, রত্ন, রুগ্ন ইত্যাদি শব্দগুলোতে 'র' -এর পরে দন্ত্য-ন হয়েছে। কারণ মাঝখানে স্বরবর্ণ থেকে প-বর্গ এবং য় ও হ ছাড়া অন্য বর্ণ এসেছে। যথা- চ, স, ত, গ।


☆ অর্জন, নির্বাচন, দর্শন, প্রবর্তন ইত্যাদি শব্দে রেফ -এর পরে একই কারণে দন্ত্য-ন হয়েছে। 


☆ প্রবচন, প্রাচীন, প্রয়োজন, প্রধান ইত্যাদি শব্দগুলোতে একই কারণে র-ফলা-এর পরে দন্ত্য-ন হয়েছে । 


☆ প্রবীণ ও নবীন শব্দদু'টি লিখতে অনেকেই ভুল করে। আশা করি, উপরের নিয়মটি জেনে নেয়ার পর আর ভুল হবে না।


☆ পূর্বাহ্ণ, মধ্যাহ্ন, অপরাহ্ণ- এ তিনটি হলো দিবসের তিনটি সময়ভাগের নাম। 

প্রথম ও তৃতীয়টিতে মূর্ধন্য-ণ আর মাঝেরটিতে দন্ত্য-ন; কারণটি আশা করি বুঝতে পেরেছেন।


৪. ট, ঠ, ড -এগুলো মূর্ধন্য পরিবারের বর্ণ। সুতরাং এগুলোর সাথে যুক্ত অবস্থায় সর্বদা মূর্ধন্য-ণ হবে। 

যেমন- ঘণ্টা, কণ্ঠ,  ঠাণ্ডা ইত্যাদি।


৫. কতগুলো শব্দে স্বভাবতই মূর্ধন্য-ণ হয়।


চাণক্য মাণিক্য গণ বাণিজ্য লবণ মণ 

বেণু বীণা কঙ্কণ কণিকা। 


কল্যাণ শোণিত মণি স্থাণু গুণ পুণ্য বেণী 

ফণী অণু বিপণি গণিকা। 


আপণ লাবণ্য বাণী নিপুণ ভণিতা পাণি 

গৌণ কোণ ভাণ পণ শাণ। 


চিক্কণ নিক্কণ তূণ কফণি (কনুই) বণিক গুণ

গণনা পিণাক পণ্য বাণ।


মনে রাখতে হবে–

এ নিয়ম শুধু একক শব্দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে; যুক্তশব্দের ক্ষেত্রে খাটবে না। তাই দুর্ণাম নয়, দুর্নাম এবং ত্রিণয়ন নয়, ত্রিনয়ন । কারণ প্রথম শব্দে 'দুঃ' উপসর্গ এবং 'নাম' যুক্ত হয়ে দুর্নাম হয়েছে, আর নয়নের সাথে যুক্ত হয়েছে 'ত্রি'  সুতরাং এরা হচ্ছে যুক্তশব্দ।


 কোথায় কোথায় ণত্ব বিধান নিষেধ

১. ত-বর্গযুক্ত দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন- বৃন্ত, বৃন্দ, গ্রন্থ।


২. বাংলা ক্রিয়াপদের শেষে দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন- ধরেন, মারেন, করেন, যাবেন, খাবেন, হবেন, নিবেন, দিবেন।


৩. বিদেশী শব্দের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন- কোরআন, জার্মান, জবান, নিশান, ফরমান, রিপন।


৪. পূর্বপদে ঋ, র, ষ থাকলে পরপদে দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন- মৃগনাভি, দুর্নাম, ত্রিনেত্র, মৃন্ময়।


৫. পদের শেষের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন- কর্মন্‌, ব্রাহ্মন্‌

Post a Comment

0 Comments