আদর্শ কন্যা (Ideal daughter)
اَلْحَمْدُ لِلّهِ وَكَفى وَسَلَامٌ عَلى عِبَادِهِ الَّذِيْنَ اصْطَفى أَمَّا بَعْدُ: فَأَعُوْذُ بِالله مِنَ الشَّيْطنِ الرَّجِيْمِ* بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ *
يَهَبُ لِمَنْ يَّشَاءُ إِنَاثًا وَّيَهَبُ لِمَنْ يَّشَاءُ الذُّكُوْرَ*
سُبْحنَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ* وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ وَالْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعلَمِيْنَ*
اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّبَارِكْ وَسَلِّمْ
নারীর অধিকার
ইসলাম ধর্ম ও অন্যান্য ধর্ম
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় নারীদের হকের ব্যাপারে নানা বৈষম্য। কখনো কোন সমাজ নারীকে এতোটা উপরে তুলেছে যেন তারাই পূজনীয়। কালের আবর্তনে আবার এ নারীই পিষ্ট হয়েছে নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার এমন যাঁতাকলে যেন তাদের অস্তিত্বটাও অসহনীয়।
নবীজী সা.-এর আগমনের যুগটা ছিলো মানব ইতিহাসের সবচে’ অধ:পতন ও বর্বরতার যুগ। এ বর্বরতার নিষ্ঠুর শিকার ছিলো নারীজাতি। আরবে তখন কন্যা সন্তান ছিলো লজ্জা-কলঙ্কের বিষয়। তাই ঘরে কোন কন্যা হলে তাকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হত। একটি নিষ্পাপ শিশুকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা কেমন পাশবিকতা? ঘরে কন্যার নাম নেয়া হবে, এটা যেন তাদের সহ্যই হতোনা! মক্কার অদূরেই ছিলো কবরস্থান যেখানে কবরস্থ করা হতো এ ধরণের হতভাগ্য কন্যা সন্তান। এরশাদ হয়েছে–
﴿وَإِذَا الْمَوْءدَةُ سُئِلَتْ* بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ﴾
‘যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে’? (সূরা তাকবীনঃ ৮-৯ )
যে সমাজে কন্যা সন্তানের অস্তিত্বটাই সহ্য করা হয় না, সে সমাজে কেউ কন্যার অধিকার নিয়ে কথা বলবে, কন্যাকে আদর-সোহাগ করতে বলবে, এটা যেমন অবিশ্বাস্য তেমনি অসাধ্য। এই অবিশ্বাস্য ও অসাধ্য কাজকেই নবীজী সা. সাধ্য করে দেখালেন। নারী জাতির প্রতি দয়ার পরশ হয়ে এরশাদ করলেন– যার ঘরে তিনটি কন্যাসন্তান হবে। আর সে তাদেরকে উত্তম তরবিয়্যত দিয়ে সভ্যতা শিখাবে। বিয়ে দেওয়া পর্যন্ত তাদের সাথে সুন্দর ও কোমল আচরণ করবে। তার জন্য জান্নাত অবধারিত।
জাহিলী যুগে আরবের সেই অন্ধকার সমাজে একমাত্র আল্লাহর নবীই নারীজাতির যথাযোগ্য মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
নবীজীর দরবারে এক সাহাবী এসে আরজ করলেন “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জীবনে বড় বড় অনেক অপরাধ করেছি”। আল্লাহর নবী সা. তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন “ইসলাম গ্রহণের ফলে আল্লাহ তায়ালা তোমার পিছনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন”
একথা শুনে ঐ সাহাবীর চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠল। সাহাবী বলতে লাগলেন, আল্লাহর হাবীব! একটা অপরাধের কথা স্মরণ হলে খুব বেশি অনুশোচনা জাগে। এমন জঘন্য অপরাধ কিভাবে করতে পারলাম? ভাবি, আমি কি তখন মানুষ ছিলাম নাকি মানুষরূপী কোন পশু ছিলাম? নবীজী সা. আবারও তাকে সান্ত্বনা দিলেন, ‘‘ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তুমি যত গুনাহ করেছ, আল্লাহ তায়ালা নিজ গুণে সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন’’।
তখন ঐ সাহাবী বলতে লাগলেন তার জীবনে কৃত সেই অপরাধের কাহিনী। সাহাবী বললেন, আল্লাহর হাবীব! আরব সমাজ তাদের ঘরে কোনো কন্যা হওয়া পছন্দ করতো না। তাই কারো ঘরে কন্যা হলে তাকে জীবিতই মাটিচাপা দেওয়া হত। আমি তাদের মতই ছিলাম। আমার স্ত্রী তখন সন্তানসম্ভবা। এ অবস্থায় আমি ব্যবসায়িক কাজে সফরে বের হই। ঘরে ফিরে জানতে পারি, আমার স্ত্রী একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেছে। শিশুটির ব্যাপারে জানতে চাইলে সে বলল, ‘‘তাকে তার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়েছি’’। আমি আশ্বস্ত হই। যাক আপদ দূর হয়েছে। আসলে কন্যাকে সে নিজের বোনের বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়েছিল। সে যুগে মানুষের চলাচল সীমিত ছিলো। কয়েক মাস, কখনো কয়েক বছর পরও আত্মীয়-স্বজন একে অন্যের সাথে দেখা করতে আসত। তাই সঠিক খবর সময়মত জানা যেতো না। আমার কন্যাশিশুটি স্ত্রীর বোনের বাড়ীতেই বেড়ে ওঠে এবং হাঁটা শেখে। তার বোন বেড়াতে এলে শিশুটি সাথে নিয়ে আসে। আমি তাকে শ্যালিকার কন্যাই ভাবতাম। ছোট্ট কোমলমতি শিশু। বেড়াতে এসে আমার সাথে কথা বলে। তাকিয়ে তাকিয়ে হাসে। তার শিশুসুলভ আচরণ আমাকে মুগ্ধ করে। তার প্রতি হৃদয়ে গভীর মমতা ও ভালোবাসা অনুভব করি। সেও আমার প্রতি ভালোবাসা দেখায়। কখনো আদর করে তাকে কোলে নিতাম। কখনো গালে চুমু খেতাম। ধীরে ধীরে তার প্রতি হৃদয়ের টান গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে। এখন যখনই সে বেড়াতে আসে– তাকে কোলে নিই। আদর করি। কথা বলি। শিশুসুলভ আচরণ করি। আমার স্ত্রী যখন নিশ্চিত হলো, তার সাথে আমার হৃদয়ের সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়ে গেছে। তখন সে জানাল ‘এ শিশুটি তার বোনের নয় বরং সে আমাদেরই কন্যাশিশু! তাকে আমি বোনের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম’। দেখো, আমাদের মেয়েটি কত ফুটফুটে! ফুলের পাপড়ির মত নিষ্পাপ! মুখের হাসি কেমন মায়াকাড়া! ‘সে আমাদের মেয়ে’ এ কথাটি শুনতেই আমার ভিতরে পাশবিকতা জেগে ওঠে। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি– তাকে জীবন্ত পুঁতে ফেলবো! একদিন স্ত্রীকে বললাম, ‘একটা কাজে বাইরে যেতে হচ্ছে। মেয়েকেও সাথে নিয়ে যাচ্ছি’। স্ত্রী বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। মেয়েটিকে নিয়ে বের হলাম। পথিমধ্যে দোকান থেকে একটি কোদাল সংগ্রহ করি। তাকে নিয়ে শহরের বাইরে নির্জন ভূমিতে চলে আসি। সেখানে গর্ত খুঁড়তে থাকি। মেয়েটি পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিল। গর্ত খোঁড়ার এক পর্যায়ে আমার কাপড়ে কিছু মাটি এসে পড়ে। ‘‘আব্বু তোমার কাপড়ে মাটি লেগে যাচ্ছে’’ এ কথা বলেই সে আমার কাপড় ঝাড়তে থাকে। ছোট্ট মেয়ের এমন মায়াবী কথা শুনেও আমার হৃদয়ে কোনো মায়া জাগেনি। বরং পূর্বের ন্যায় গর্ত খুঁড়ায় মনোযোগ দেই। গর্ত খোঁড়া শেষ হলে তাকে ধরে জোরপূর্বক সেই গর্তে ফেলে দেই! মেয়েটি কাঁদতে থাকে। চিৎকার দিয়ে বলে, ‘আব্বু! আমার চুলে মাটি পড়ছে। আব্বু! আমার চোখে-মুখে মাটি পড়ছে’। আমার হৃদয় তখন পাশবিকতার অন্ধকারে এমন পাষাণ হয়েছিলো, যেন তার কান্নার আওয়াজ আমার কানেই পড়ছে না। তার আর্তচিৎকারে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু মাটি ফেলতে থাকি। এক সময় তার কান্না থেমে যায়। সে চিরতরে মাটির নীচে দাফন যায়। আমি ঘরে ফিরে আসি। স্ত্রীকে ঘটনা শুনাই। এই মর্মান্তিক ঘটনা শুনে বেচারী নীরব হয়ে যায়। একজন অসহায় স্ত্রীর পক্ষে এ ছাড়া আর কী করার আছে? আল্লাহর হাবীব! আমি জীবনে এমন একটা সময় পার করেছি যখন নিজ হাতে কন্যাসন্তান দাফন করেছি। আপনি এসে আমাদেরকে মানবতা-মনুষ্যত্ব শিখিয়েছেন। বর্বরতার অন্ধকার থেকে ইসলামের আলোর পথে ফিরিয়ে এনেছেন। শিখিয়েছেন কন্যাদের কিভাবে ভালোবাসতে হয়। এখন কোনো কন্যা সন্তান আমার নেই। আমার কোলে যে মেয়েটি দেখছেন সে আমার ভাতিজী। কন্যাশিশুর প্রতি মায়া ও মমতা আমার হৃদয়ে এখন পরিপূর্ণ। ভাতিজীকেই কোলে নিয়ে আদর করি।
নবুওয়াতের পাক যবানে সর্বপ্রথম উচ্চারিত হয়েছিলো– “কন্যাসন্তান রহমতস্বরূপ”। বর্তমান সমাজেও পুত্রসন্তানের জন্মগ্রহণে আনন্দ প্রকাশ করা হয়। আর কন্যাসন্তান হলে চেহারা মলিন হয়ে যায়। অপর দিকে পুত্রসন্তান হলে, বাবা-মা নিরাপত্তাবোধ করে। সে বড় হবে, ব্যবসা করবে, অর্থ উপার্জন করবে, পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা হবে। আর কন্যা হলে– প্রথমত: এটাই ধরে নেওয়া হয় যে, সে কোন ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে না। কিছু করতে পারলেও তার নিরাপত্তা বিধান জীবনভর পুরুষকেই করতে হবে।
দ্বিতীয়ত: পুত্রের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি পায়। বংশের নাম টিকে থাকে। আর কন্যারা তো শুধু অন্যের ঘরের অলংকার হয়ে জীবন পার করে। তাই ছেলে হলে আনন্দটা বেশি প্রকাশ করা হয় আর মেয়ে হলে কম প্রকাশ করা হয়। বাস্তবে, সন্তান– ছেলে হোক মেয়ে হোক, উভয়ের জন্মতেই খুশি প্রকাশ করা উচিৎ।
ইসলাম ধর্মের প্রতিটি বিষয়ই সুন্দর ও ভারসাম্যপূর্ণ। শরিয়ত আমাদেরকে এ শিক্ষা দেয়– সপ্তম দিনে সন্তানের জন্য আক্বীকা করো। এটা আল্লাহ তায়ালার প্রতি বান্দার পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। বান্দা যেন বলছে, ‘‘হে আল্লাহ! আপনিই দয়া করে আমাকে এ অমূল্য নেয়ামত দান করেছেন’’। অর্থাৎ আনন্দ প্রকাশ শুধু ছেলের ক্ষেত্রেই নয়। বরং আল্লাহপ্রদত্ত নেয়ামত মনে করে ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্যই আনন্দ প্রকাশ করা চাই।
আদর্শ কন্যার গুণ
দ্বীনদার বাবা-মা তাদের কন্যাকে খুব যত্নের সাথে লালন-পালন করে থাকেন। তার শিক্ষা-দীক্ষার প্রতিও থাকেন পূর্ণ যত্নশীল। উত্তম থেকে উত্তম প্রতিপালনে তাকে গড়ে তুলতে চান। তাই তাদের কন্যাদের মাঝে যে গুণগুলো থাকা জরুরি।
১. লজ্জাশীলতা ও চরিত্রের নির্মলতা
সর্বপ্রথম যে গুণটি নারীদের মাঝে থাকা আবশ্যক, সেটা হলো– লাজুকতা ও চরিত্রের নির্মলতা। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে–
الحياء شعبة من الإيمان
‘লজ্জা ঈমানের একটি অন্যতম শাখা’।
ইসলাম ধর্মে লজ্জার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। এখানে লজ্জা দ্বারা উদ্দেশ্য একটি বাচ্চার মাঝে এতটুকু লজ্জা থাকতে হবে যে লজ্জা তাকে পরপুরুষের সামনে কথা বলা থেকে বিরত রাখে। বাধ্য হয়ে কখনো বলতে হলেও দৃষ্টি যেন অবনত থাকে। লজ্জার কারণে কথা বলতে একটা সংকোচবোধ হয়। লজ্জা একটি অদৃশ্য পোশাক। গায়ে পোশাক জড়ানো থাকলে মানুষ যেমনিভাবে নিরাপদ থাকে তেমনিভাবে লজ্জার পোশাক এটা দেখা যায় না ঠিক কিন্তু এই লজ্জাই নারীকে পরপুরুষ থেকে সুরক্ষিত রাখে। তাই বাচ্চাদের লজ্জা শিখানো চাই। আজকাল সভ্যতার মুখোশধারী কুফুরী সমাজে লজ্জাকে নিছক একটি ব্যাধি মনে করা হয়। তাদের মেয়েদেরকে বুঝানো হয়, ‘‘ছেলেদের সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলবে’’। এটা চরম নিন্দনীয় কাজ। এতে শুধু লজ্জা সংকোচই দূর হয় না, বরং তার সাথে সাথে ঐ মেয়ের মধ্যে বাসা বাঁধে চারিত্রিক সর্বপ্রকার অবক্ষয়। পুরুষের চরিত্র নষ্ট হলে এর ক্ষতি অল্প ছড়ায়। কিন্তু একজন নারীর চরিত্র নষ্ট হলে এর খারাবী খুব দ্রুত ও ব্যাপক সংক্রামক হয়। তাই যে নারী থেকে লজ্জা দূর হয়ে যায় সে শুধু নিজেই ধ্বংস হয় না বরং তার সাথে ডজনখানেক পুরুষকেও ধ্বংস করে ছাড়ে।
হযরত শুআইব আ.-এর দুই কন্যার আলোচনা কুরআনে এসেছে। শুআইব আ. তখন বয়োবৃদ্ধ। তাঁর কোন পুত্রসন্তান ছিলো না। শুধু দুুটি কন্যাসন্তান ছিলো। ঘরে পুরুষ না থাকলে পুরুষদের অনেক কাজ মেয়েদের করতে হয়। তাই ছাগল চড়ানো, কূপ থেকে পানি উঠানো এ কাজগুলো শুআইব আ.-এর কন্যারাই করতেন। হযরত মূসা আ. যখন মাদায়েন পৌঁছলেন তখন এক জায়গায় দেখলেন, রাখালরা তাদের বকরিগুলোকে পানি পান করাচ্ছে। রাখালরা ফিরে যাওয়ার সময় কূপের মুখে বড় একটি পাথর দিয়ে বন্ধ করে দিল। যাতে অন্য কেউ কূপের পানি ব্যবহার করতে না পারে। বস্তির লোকজন চলে যাওয়ার পর হযরত শুআইব আ.-এর কন্যাদ্বয় ছাগলগুলো নিয়ে যখন কূপের নিকট আসলেন তখন কুপের মুখ বন্ধ! তাঁদের গায়ে এতটুকু শক্তিও নেই যে, এ বিশাল পাথর সরিয়ে বকরিগুলোকে পানি পান করাবেন। তাই কূপের পাশে জমে থাকা অবশিষ্ট পানিই বকরিগুলোকে পান করাতে লাগলেন। হযরত মূসা আ. এটা দেখে কূপের মুখ থেকে পাথরখণ্ড সরিয়ে তাঁদের ছাগলগুলোকে পানি পান করার সুযোগ করে দিলেন। তাঁরা বাড়ী ফিরে পিতাকে ঘটনা শুনাল। হযরত শুয়াইব আ. তাদের একজনকে বললেন, তাকে আমার নিকট নিয়ে এসো। কুরআন শরীফে ঘটনাটি এভাবে এসেছে–
﴿فَجَآءَتْهُ اِحْدٰىهُمَا تَمْشِیْ عَلَى اسْتِحْیَآءٍ﴾
‘‘সে দুই রমণীর একজন লজ্জা জড়ানো পদক্ষেপে তার কাছে আসল’’। (সুরা কাসাস: ২৫)
যে বালিকাটি এসেছিলো সে এতোটাই লাজুক ছিলো যে, হাঁটার মধ্যেও সেই লজ্জার ভাব ফুটে উঠেছে। বুঝা গেলো, ‘লজ্জা’ এমন এক মহা গুণ যেটা আল্লাহ তায়ালাও পছন্দ করেন। সুতরাং যাদের ঘরে কন্যাসন্তান আছে তারা কন্যাকে বুঝাবে যে, ‘‘মেয়েদের লজ্জা একটু বেশিই থাকতে হয়’’ এবং তাদেরকে পুত:পবিত্র জীবনযাপনে অভ্যস্ত করাবে। এটা খুবই জরুরি।
নবীকন্যা হযরত ফাতেমা রা.-এর লজ্জা
রাসূল সা. -এর প্রিয় কন্যা, জান্নাতী নারীদের সর্দারনী হযরত ফাতেমা রা. অত্যাধিক লজ্জাবতী ছিলেন। একবার মজলিসে নবীজি সা. সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, বলো তো ‘‘নারীদের জন্য কোন জিনিসটা সবচে’ বেশি উত্তম?’’ সাহাবায়ে কেরাম সবাই নীরব। কেউ কোন উত্তর দিলেন না। কোন এক কাজে হযরত আলী রা. মজলিস থেকে উঠে আসলেন। ঘরে গিয়ে হযরত ফাতেমা রা. কে জিজ্ঞেস করলেন। হযরত ফাতেমা রা. বললেন, “যে নারী কোন পরপুরুষকে দেখেনি এবং কোন পরপুরুষও তাকে দেখেনি” এটাই হল নারীদের জন্য সবচে’ উত্তম। হযরত আলী রা. ফিরে এসে নবীজীর সামনে এ উত্তর পেশ করলেন। নবীজী সা. উত্তর শুনে খুব খুশি হলেন এবং বললেন, “ফাতেমা আমার কলিজার টুকরো”
হযরত ফাতেমা রা.-এর জীবনীতে পাওয়া যায়। একবার তিনি আসমা বিনতে উমাইস রা. কে বললেন, আসমা! মৃত্যুর পর গোসলের জন্য দেহ অনাবৃত করা হয়, এটা আমার অপছন্দ। আসমা রা. বললেন, আমি আফ্রিকার লোকদেরকে দেখেছি তারা মৃত ব্যক্তিকে কাপড় দিয়ে ঢেকে গোসল দেয়। সাইয়্যেদা হযরত ফাতেমা রা. বললেন, এটা খুব সুন্দর পদ্ধতি! আমি তোমাকে অসিয়্যত করছি, মৃত্যুর পর তুমি আমাকে গোসল দিবে। পাত্রে পানি ভরার কাজে আলী রা. তোমাকে সহযোগিতা করবেন। কেননা তিনি আমার স্বামী। তোমরা দুজন ছাড়া অন্য কেউ যেন আমার কাছে না আসে। হযরত ফাতেমা রা.-এর যখন ইন্তেকাল হল। তাঁর অসিয়্যত অনুযায়ী হযরত আলী রা. পানি এনে দিলেন আর হযরত আসমা রা. তাকে গোসল দিতে লাগলেন। এ সময় আম্মাজান হযরত আয়শা রা. সেখানে আসলেন। তখন আসমা রা. হযরত ফাতেমা রা.-এর অসিয়্যতের কথা তাঁকে বললে তিনি বলেন, হ্যাঁ! আমি তাঁর অসিয়্যতের মর্যাদা অবশ্যই রক্ষা করবো। তিনি নিকটে না এসে সরে গেলেন।
তার দ্বিতীয় অসিয়্যত ছিলো– তার জানাযার খাটিয়া যেন রাতে বহন করা হয়। যাতে কেউ বুঝতে না পারে, তার দৈহিক গঠন কেমন ছিলো।
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়শা রা. এর লজ্জা
হযরত আয়শা রা. হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর অত্যন্ত স্নেহভাজন কন্যা ছিলেন। তাকে আল্লাহ তায়ালা কী পরিমাণ লজ্জা দান করেছিলেন তা নবীজীর সাথে তাঁর বিয়ে হওয়ার দ্বারাই সহজে অনুমান করা যায়। কেননা আল-কুরআনের শাশ্বত বাণী,
﴿والطّيِّبتُ لِلطِّيِّبِيْنَ والطَّيِّبُوْنَ لِلطَّيِّبتِ﴾
‘‘পুণ্যবতী নারী পুণ্যবান পুরুষদের জন্য আর পুণ্যবান পুরুষ পুণ্যবতী নারীদের জন্য’’ (সূরা নূরা: ২৬)
নবীজি সা.-এর সত্তার প্রতি লক্ষ্য করলেই তার পবিত্রতার বিষয় আন্দায করা যায়। কাফের ও মুনাফেকরা যখন হযরত আয়শা রা.-এর বিরুদ্ধে অপবাদ রটানো শুরু করল। তখন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা কুরআনের আয়াত নাযিল করে তার পবিত্রতার সাক্ষ্য দিলেন। হযরত ইউসূফ আ. উপরও অপবাদ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু সেখানে শিশুর মাধ্যমে পবিত্রতার সাক্ষ্য প্রদান করা হয়।
বিবি মরিয়ম আ.-এর উপর যখন অপবাদ আরোপ করা হয় তখন ছোটো দুধের বাচ্চা দ্বারা তার সাক্ষ্য প্রদান করা হয়। কিন্তু যখন নবীজীর জীবনসঙ্গিনী হযরত আয়শা রা.-এর উপর অপবাদ আরোপ করা হল তখন আল্লাহ তায়ালা কোন সৃষ্টিজীবের মাধ্যম ছাড়া সরাসরি ওহীর মাধ্যমে তাঁর পবিত্রতার সাক্ষ্য প্রদান করেন।
বিবি মরিয়ম আ.-এর লজ্জা
বিবি মরিয়ম আ.-এর আলোচনা কুরআনুল কারীমে এসেছে। তিনি যখন প্রাপ্তবয়স্ক হলেন তখন ইবাদতখানায় জীবন অতিবাহিত করতে থাকেন। একদিন তিনি গোসলের জন্য ঘরের পূর্ব পাশে পানির ব্যবস্থা করলেন। আল্লাহ তায়ালা হযরত জিবরাইল আ. কে একজন সুদর্শন পুরুষের আকৃতিতে তার কাছে পাঠালেন। হযরত মরিয়ম হঠাৎ একজন পুরুষ দেখে চমকে উঠলেন এবং বললেন, ‘‘আমি তোমার থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’’
﴿قَالَتْ إنِّيْ أَعُوْذُ بِالرَّحْمنِ مِنْكَ إنْ كُنْتَ تَقِيًّا﴾
‘‘মরিয়ম আ. বললেন, তোমার থেকে দয়াময় আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি যদি তুমি আল্লাহকে ভয় করো’’ (তাহলে এখান থেকে সরে যাও)। (সূরা মারয়াম:১৯)
বিবি মরিয়ম আ. আমাদের সভ্য যুগের নষ্ট চিন্তার কোন নারী ছিলেন না যে, তিনি কোনো পরপুরুষকে মুচকি হেসে স্বাগত জানাবেন। তিনি তো পবিত্র জীবন-যাপনকারিণী পুণ্যবতী একজন নারী। তাই তিনি এমন পরিস্থিতিতে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। সাথে অবাকও হলেন, একজন বেগানা পুরুষ এখানে কিভাবে এলো?! হযরত জিবরাইল আ. যখন দেখলেন, বিবি মরিয়ম ঘাবড়ে গেছেন, তখন (তিনি) বললেন,
﴿قَالَ إِنَّمَا أَنَا رَسُوْلُ رَبِّكِ ق لِأَهَبَ لَكِ غُلَامًا زَكِيًّا﴾
‘‘আমি তোমার রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত দূত (ফেরেশতা) আমি (এ উদ্দেশ্যে এসেছি) যাতে তোমাকে একটি পবিত্র পুত্রসন্তান দান করতে পারি’’। (সূরা মারয়াম:১৯)
হযরত জিবরাইল আ.-এর কথা শুনে বিবি মরিয়ম আ. আরো ঘাবড়ে গেলেন। একে তো তাঁর সামনে একজন পরপুরুষ! আবার সে বলছে, তার নাকি পুত্রসন্তান হবে! এটা কিভাবে সম্ভব? আমার মধ্যে সন্তান হওয়ার তো কোন সম্ভাবনাই নেই!
তাই বললেন–
﴿قَالَت أنّٰى يَكُوْنُ لِيْ غُلَامٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِيْ بَشَرٌ وَلَمْ أَكُ بَغِيًّا﴾
‘‘(মরিয়ম আ.) বললেন আমার পুত্রসন্তান কিভাবে হবে? অথচ আমাকে কোন পুরুষ কখনো স্পর্শ করেনি আর আমি কোন বদকার নারীও ছিলাম না!’’ (সূরা মারয়াম:২০)
মরিয়ম আ. জানতেন, বাচ্চা হওয়ার মাধ্যম দু’টি– হয়ত বিবাহের মাধ্যমে নয়ত যিনার কারণে। আমার মাঝে তো এ দু’টির কোনটিই নেই। তো কিভাবে আমার পুত্র হবে? আমি না বিবাহ করেছি না যিনা করেছি। তার কথা শুনে জিবরাইল আ. বললেন,
﴿كَذلِكِ ج قَالَ رَبُّكِ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌ ج وَلِنَجْعَلَهُ ايَةً لِّلنَّاسِ وَرَحْمَةً مِّنَّا ج وَكَانَ أَمْرًا مَّقْضِيًّا﴾
‘‘তিনি বললেন (হ্যাঁ), এভাবেই হবে, তোমার প্রভু বলেছেন, এটা আমার জন্য খুবই সহজ কাজ এবং আমি তাকে মানুষের জন্যে (কুদরতের) একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ বানাতে চাই। এটা একটি স্থিরকৃত বিষয়। (সূরা মারয়াম:২১)
كَذلِكِ (বিবাহ ও ব্যভিচার ছাড়া) "এভাবেই হবে" শব্দটি বিবি মারয়াম আ.-এর নির্মল চরিত্রের উপর একটি সীলমোহর। যার স্বীকৃতি কুরআন দিয়েছে। কুরআন বলছে, হে মরিয়ম, তুমি যা বলছো তা সম্পূর্ণ সত্য! এই শব্দটি বিবি মারয়াম আ.-এর শানে বর্ণিত হয়েছে। এটি তার পবিত্রতার প্রমাণ বহন করে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রত্যেকের ঘরে এমন পবিত্র কন্যাসন্তান দান করুন যার পবিত্রতার সাক্ষ্য স্বয়ং ফেরেশতারাও দিবেন।
২. ইবাদত ও নেককাজের আগ্রহ
দ্বিতীয় গুণ: ছোটবেলা থেকেই বাচ্চার কচিমনে নেককাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। বাচ্চাকে এমনভাবে তরবিয়্যত দিতে হবে যাতে তার মধ্যে ইবাদতের আগ্রহ পূর্ণ মাত্রায় তৈরি হয়ে যায়।
৩. খেদমতের জযবা
তাদের মাঝে খেদমতের জযবা সৃষ্টি করা চাই। আল্লাহ তায়ালা পুরুষজাতিকে জান্নাত দিবেন ইবাদতের বিনিময়ে আর নারীজাতিকে জান্নাত দিবেন খেদমতের বিনিময়ে। ইরশাদ হয়েছে,
اِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْرَهَا، وَحَفِظَتْ فَرْجَهَا، وَأَطَاعَتْ زَوْجَهَا قِيْلَ لَهَا: اُدْخُلِي الْجَنَّةَ مِنْ أيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شِئْتِ.
যখন কোনো নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামায পাবন্দির সাথে আদায় করবে। রমযানের রোযাগুলো রাখবে। আপন পবিত্রতা রক্ষা করে চলবে এবং নিজ স্বামীর আনুগত্য করবে (কেয়ামতের দিন) তাকে বলা হবে, তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে প্রবেশ কর।
তাই ছোট বয়সে থেকেই তাদের মাঝে খেদমতের আগ্রহ সৃষ্টি করা জরুরি। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে বাচ্চাদের প্রকৃতিতে খেদমতের একটা আগ্রহ থাকেই। প্রয়োজন শুধু কৌশলে সেটাকে সংশোধন করে দেওয়া।
ঘরে অবস্থানকালে বেশ কয়েকবার এমন হয়েছে, আমার নাতনি হান্নানা কাছে এসে বলে, দাদাজী! আমি কি তোমার কোন সহযোগিতা করতে পারি? ছোটো বাচ্চা। বয়স কত হবে, চার কি পাঁচ। সেও মনে করে আমাকে খেদমত করতে হবে। আমি যে এক-দুই ঘন্টা ঘরে বসে অধ্যয়ন করি অথবা লেখালেখি করি। আমার পাশে বসে থাকে। ছোটো ছোটো কাজ করে দেয়।
৪. দৃঢ়তা
তাদেরকে দৃঢ়তা শেখাতে হবে। জীবনে যত ঝড়-ঝাপটাই আসুক না কেন যাতে ভেঙ্গে না পড়ে। সর্বদা দ্বীনের উপর অবিচল থাকতে পারে। নবীকন্যা হযরত ফাতেমা রা. ঘরের কাজ নিজ হাতে করতেন। কাজ করতে করতে তাঁর হাতে দাগ পড়ে গিয়েছিল।
৫.দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি
বাচ্চাদের ব্যাপারে আরো একটা বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। সেটা হলো– দুনিয়াবিমুখতা। এই গুণটি তাদের মধ্যে তৈরি করা খুবই জরুরি। অন্যথায় দুনিয়ার চাকচিক্যে গা ভাসিয়ে দিবে। স্বর্ণ-রূপার প্রতি আকর্ষণ তো তাদের স্বভাবজাত! যদি বলা হয়, ‘‘তোমার দেহে শলাকা ফোঁড়ানো হবে’’ সে অস্থির হয়ে বলবে, কী! আমার দেহে শলাকা ফোঁড়ানো হবে?! কিন্তু যদি বলা হয়, ‘স্বর্ণের শলাকা’’! তখন খুশি হয়ে বলবে, ও আচ্ছা, তাহলে আর দেরি কিসের? এটা আর কিছু নয়, স্বর্ণ-রূপার প্রতি তাদের স্বভাবজাত আকর্ষণেরই কারিশমা!
৬.শিক্ষার গুরুত্ব
শিশুর শিক্ষার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। যাতে লেখাপড়া করে বিজ্ঞতার সাথে সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে। শরিয়ত তাদেরকে স্বল্প বুদ্ধির অধিকারী বলেছে বলে অনেক নারীই ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। কেন আমাদেরকে অসম্পূর্ণ বুদ্ধির অধিকারী বলা হল? বোন! এর মর্ম বুঝার চেষ্টা করো। অসম্পূর্ণ বুদ্ধি বলে একথা বুঝানো হয়নি যে তারা মেধাহীন, নির্বোধ। তাদের মাঝে অনেক মেধাবী আছে। তাদের জ্ঞান-বুদ্ধিও যথেষ্ট উন্নত। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে ভাই-বোন একসাথে কুরআন হিফজ শুরু করলে ভাইয়ের আগেই বোন হিফজ শেষ করে ফেলে। তার কারণ– ছেলেদের মধ্যে কিছুটা বেপরোয়া ভাব থাকে। সন্দেহ নেই যে, তাদের মাঝে অনেক প্রতিভাবান মেয়ে আছে। তবে তাদের মাঝে একটি দুর্বলতাও আছে। তারা খুবই আবেগপ্রবণ।
Blackmail তথা-সামান্য হুমকি-ধমকিতে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তাদের সিদ্ধান্তগুলো হয় খুবই নড়বড়ে। আবেগতাড়িত হয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হয়। তারা নিজেরাও এ কথা স্বীকার করে যে, বাস্তবেই আমাদের সিদ্ধান্তগুলো এমনই হয়। কারো প্রতি সন্তুষ্ট হলে কামনা করে, ‘‘পৃথিবীতে আর কেউ থাক বা না-থাক তাতে কিছু যায় আসে না। এই একটি মানুষই যথেষ্ট’’! এ মানুষটার উপরই আবার যখন রেগে যায় তখন বলে, ‘‘হায়! যদি সে এই মুহূর্তে আমার সামনেই যমীনে দাফন হয়ে যেতো! তাকে সহ্য হচ্ছে না আমার’’! এই আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্তের কারণেই বুদ্ধির ক্ষেত্রে তাদেরকে অপরিপক্ব বলা হয়েছে। নতুবা লেখাপড়ায় তারা যথেষ্ট অগ্রসর। উচ্চ উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে তারা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে। হাফেযা-আলেমাও হচ্ছে। তাদের স্মরণশক্তি নিয়ে কারো দ্বিমত নেই।
৭.সহমর্মিতা
বাচ্চাদের সহমর্মিতার তালিমও দিতে হবে। যাতে অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়ার মনোভাব তাদের মাঝে সৃষ্টি হয়। মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী বা অন্য কারো কষ্টকে যেন নিজের কষ্টই মনে করে। একটি বাচ্চা আদর্শবান হতে হলে মনোবিজ্ঞানীদের মতে–
"Make a list of thing you are doing to please your parents."
(তাকে একটি তালিকা তৈরি করে নিতে হবে। সে বাবা-মাকে খুশি করার জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে)
৮.ঘরোয়া কাজে সহযোগিতা।
মেয়েরা যখন কিছুটা বড় হয়, তখন মা, ভাইবোন বা অন্য কারো সাথে কোন বিষয় নিয়ে মতবিরোধ হতে পারে। এমন হলে দ্রুত সমঝোতা করে নিবে। বাচ্চারা যেন ঘরের প্রতিটি সদস্যের সাথে যথেষ্ট সময় দেয়। ঘরোয়া বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করে। যেমন– খাবার-দাবার তৈরি করা, ঘর-দোর ঝাড়ু দেয়া, কাপড় ধোয়া ও ইস্ত্রি করা ইত্যাদি কাজে মাকে সহযোগিতা করবে। নিত্যদিনের যাবতীয় কাজে অংশগ্রহণ করতে সংকোচ না করে।
৯.সুস্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান থাকবে
মেয়েরা নিজেদের সুস্থতার প্রতিও লক্ষ্য রাখবে। দেহ সর্বদা পাক-সাফ রাখবে। পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন কাপড় পরবে। এমন যেন না হয়, মাথার চুলগুলো এলোমেলো। গায়ে ময়লা কাপড় জড়ানো। শরীরটা দুর্গন্ধযুক্ত। এতে বাবা-মাও পেরেশান হবেন। তারা ভাবেন, ‘‘আমাদের মেয়েটার হয়ত কোন রোগ হয়েছে’’। নিয়মিত গোসল করবে। নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবে। সুন্দর পোশাক পরিধান করবে। সর্বদা পরিপাটি হয়ে থাকবে। এটা তাদের কর্তব্য। নিজের প্রতি যত্নবান থাকলে, বাবা-মাও খুশি হবেন। তারা বলবেন, আমাদের মেয়েটা খুব গোছালো। সুন্দর ও সুশৃঙ্খল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। কুমারী মেয়েরা হালকা সাজগোজ করবে। যেন দূর থেকে বুঝা না যায়। এটাকে বলে, Neutral makeup (হালকা মেকাপ) যুবতী মেয়েদের জন্য এটাই বেশি উপযোগী।
১০ ঘরোয়া বিষয় ঘরেই রাখবে
"Listen when your parents want to say something."
মা-বাবা কোন কথা বললে গুরুত্ব দিয়ে শুনবে। কোন কাজ দিলে, কষ্ট হলেও করবে। অবহেলা করবে না। স্কুলে পাঠালে, মন দিয়ে লেখাপড়া করবে। উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করার চেষ্টা করবে। ঘরে কোন ঝামেলা বাধলে বাবা মার সাথে আলোচনা করে সমাধান করে নিবে। অন্য কাউকে বলবে না। উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীরা এ ভুলটা করে থাকে। তারা পারিবারিক বিষয় বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে। এতে সমস্যার সমাধান হয় না বরং আরো গুরুতর হয়।
১১. সততা ও বিশ্বস্ততা
তাদের কর্তব্য "Always tell the truth." (সদা সত্য বলবে) মা-বাবার কাছে সবসময় বিশ্বস্ত থাকবে। তাদের সাথে সত্য কথা বলবে। ‘মিথ্যা’ যে কারো বিপথগামী হওয়ার প্রথম ধাপ। ব্যাপার যত জটিলই হোক, সত্যটাই প্রকাশ করবে। মিথ্যার আশ্রয় নিবে না।
১২. শ্রদ্ধা ও নির্ভরতা
"Always trust and respect your parents"
মা-বাবার প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখবে, তাদেরকে শ্রদ্ধা করবে।
১২. মা-বাবার অধিকার সব কিছুর উর্ধ্বে
"Priorities your Parents over other tasks."
সর্ব বিষয়ে বাবা মাকে আগে রাখবে। কোনো জটিল অবস্থার সম্মুখীন হলে বাবা-মাকে প্রথমে বলবে। পেরেশানী কেটে গেলেও বলবে–‘‘আমি এখন ভালো আছি’’।
১৩. উপহার-উপঢৌকন
বাবা-মা সন্তানের জন্য যেমনিভাবে উপহার সামগ্রী আনে। তেমনিভাবে সন্তানরাও বাবা মাকে নিজেদের পক্ষ থেকে উপহার দিবে। এতে একদিকে যেমন ভালোবাসা প্রকাশ পায় অপরদিকে সম্পর্কও আরো গভীর ও নিবিড় হয়।
১৪. আপনজনদের সাথে সুসম্পর্ক
দাদা-দাদি, নানা-নানি এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন সবার সাথে সম্পর্ক ভালো রাখবে। ফোনে তাদের খোঁজখবর নিবে। এতে বাবা- মা খুশি হবেন।
১৫. পরামর্শ
সমস্যা যত জটিল হোক, কখনো নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে যাবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে পিতা-মাতার সাথে অবশ্যই পরামর্শ করে নিবে।
১৬. শৈশবের স্মৃতি
ছোটোবেলার স্মৃতিগুলো মাঝে মাঝে আলোচনা করবে। এধরনের স্মৃতিচারণে বাবা-মা আনন্দ পান।
১৭. গৃহস্থালি কাজকর্ম
"She should learn house keeping from her mother."
ঘরোয়া কাজগুলো মায়ের কাছ থেকে শিখে রাখবে। কর্মদক্ষতা আপনা থেকেই অর্জিত হয় না। কারো থেকে শিখতে হয়। ভালো খাবার তৈরির কৌশলও মায়ের কাছ থেকে শিখে নিবে।
১৮. বন্ধুদেরকে পরিচয় করানো
অবশ্যই সমস্ত বন্ধুদের মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে যাতে বাবা জানতে পারেন কে তার বন্ধু? এবং তারা কেমন? আমরা দেখেছি অল্পবয়সী ছেলে মেয়েরা বাবা-মার সাথে তাদের বন্ধুদের পরিচয় করাতে সংকোচবোধ করে, তারা এই কাজটিকে কঠিন বলে মনে করে। তারা মনে করে যে আমরা একটি নতুন প্রজন্ম এবং আমাদের বাবা—মা বৃদ্ধ মানুষ, তাদের সাথে আমরা কী পরিচয় করিয়ে দেব?
আধুনিক ছেলে
এক স্কুল-টিচার। তার পিতা একদিন স্কুলে এলেন ছেলের সাথে দেখা করতে। টিচার ছেলে দূর থেকে দেখল তার বাবা আসছেন। তিনি এসেছেন গ্রাম থেকে। তাই তার পরনে ছিল লুঙ্গি। শহরে লুঙ্গি পরাটা বেমানান। শিক্ষক ভাবলেন, আমার বাবা যদি এ অবস্থায় এখানে আসেন তাহলে ছেলেরা কী ভাববে? তারা বলবে, আমাদের টিচার এমন নিচু পরিবারের? তাই বাবা ক্লাসে ঢুকার পূর্বেই টিচার ছাত্রদের উদ্যেশ্যে বললেন।আমার বাবার বন্ধু এসেছেন, আমি এখন তার সাথে দেখা করব। আল্লাহর কী মহিমা! তার বাবা কথাটা শুনে ফেললেন। বাবা ছিলেন আত্মমর্যাদাবান ব্যক্তি। তিনি ক্লাসে ঢুকে বাচ্চাদের বললেন, বাচ্চারা! উনি ঠিকই বলেছে, তবে কথা হচ্ছে আমি তার বাবার বন্ধু নই, তার মায়ের বন্ধু!
সম্পর্ক অটুট রাখার আদর্শনীতি
"Ten Steps to Improving Mother Daughter Relationship"
মা ও মেয়ের মধ্যকার সম্পর্ক অটুট রাখার দশটি মূলনীতি।
💖 ১.মা ও মেয়ের মাঝে মনোমালিন্য হলে
"Make the first move yourself." মেয়ে আগে বেড়ে মাকে খুশি করার চেষ্টা করবে। মায়ের দায়িত্ব নয় যে , সে তার মেয়ের রাগ ভাঙাবে। বরং মেয়ের জন্য কর্তব্য, সে নিজের মাকে খুশি করার চেষ্টা করবে। তাঁর রাগ ভাঙাবে।
💖 ২."Don't expect her to change."
কখনো এ আশায় থাকবে না যে, মায়ের আচরণে পরিবর্তন আসবে। মায়ের স্বভাব হয়ত আগের মতই থাকবে। মেয়ে বরং নিজেকে শুধরাবে। নিজের আচরণে, উচ্চারণে পরিবর্তন আনবে।
💖 ৩."Have Realistic Expectation from your Mother."
মায়ের কাছ থেকে বাস্তবধর্মী আশাই রাখবে।
💖 ৪."Never Break Communication with Mother."
কোন অবস্থাতেই মায়ের সাথে কথা বলা বন্ধ করবে না। সম্পর্ক যতই খারাপ হোক না কেন, কথা চালিয়ে যাবে।
💖 ৫."Be Active Listener."
মায়ের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনবে।
💖 ৬."Repair Damage Quickly."
কোনো বিষয়ে মতানৈক্য তৈরি হলে, দ্রুত সমঝোতা করে নিবে।
💖 ৭.নিজেকে মায়ের স্থানে রেখে চিন্তা করবে।
চিন্তা করে বের করার চেষ্টা করবে, মা তাকে এ কথা কেন বলছেন? "Put yourself in her shoes." নিজেকে মায়ের স্থানে রেখে চিন্তা করবে। তাহলে বুঝতে পারবে মা এ কথা কেন বলছেন।
💖 ৮.Learn to forgive
কন্যাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত: "Learn to forgive." (সর্বদা ক্ষমা করতে শিখুন) কেউ যদি উপেক্ষা করে বা কষ্ট দেয় তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেবে।
💖 ৯.মা ও মেয়ের মাঝে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার কারণ
যে বিষয়টি মা ও মেয়ের সম্পর্ক খারাপ করে সেটা হল, কথা বলতে গিয়ে সবসময় পিছনের কথা টানতে থাকা। এটাকে বলে "পুঁতে ফেলা মুর্দাকে পূনরায় তুলে আনা। স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন ঝগড়া বাধে তখন শুরু হয় বিয়ের দিন থেকে। স্ত্রী বলে, আমি প্রথম যেদিন তোমাদের বাড়িতে এসেছিলাম সেদিন তোমার মা আমাকে এ কথা বলেছিল। তোমার বোন একথা বলেছে।
জীবনকে সহজ করুন। অতীতের কষ্টগুলো ভুলে যান। বর্তমান নিয়ে ভাবুন। অধিকাংশ নারীর মধ্যেই এ অভ্যাসটি থাকে। এটা বর্জন করা উচিৎ।
💖 ১০.Don't bring a third party to resolve your problems.
ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের জন্য তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে মাঝে দাঁড় করাবেন না। বাবা-মা ভাইবোন সবার সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার চেষ্টা নিজেকেই করতে হবে। তৃতীয় কোনো ব্যক্তির মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বাবা-মার কষ্টে মেয়েরাই বেশি সমব্যথী হয়। সারাজীবন ভালো বন্ধু হয়ে থাকে। সাধারণত ছেলেরা বাবা মাকে অতটা ভালোবাসে না, যতটা একটি মেয়ে তার বাবা-মাকে ভালোবেসে থাকে।
হযরত ফাতেমা রা.
একবার হযরত ফাতেমা রা. রুটি তৈরি করলেন। খেতে বসে ভাবলেন, "আব্বাজানের জন্য খাবারের কোন ব্যবস্থা হল কিনা?" তাই রুটির অর্ধেক খেয়ে, বাকী অর্ধেক কাপড়ে পেঁচিয়ে নবীজী সা.-এর দরবারে হাজির হলেন। নবীজি সা. মেয়েকে স্বাগত জানিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কী মনে করে এসেছো মা? হযরত ফাতেমা রা. বললেন, আপনার জন্য রুটি এনেছি। ভাবলাম, হয়ত খাবারের কোনো ব্যবস্থা হয়নি। নবীজি সা. রুটির টুকরাটা মুখে দিয়ে বললেন, ফাতেমা, ঐ সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ! আজ তিনদিন হলো, আমার মুখে খাবারের কোন লোকমা যায়নি। তিনি তো একজন কন্যাই ছিলেন যিনি পিতার কষ্ট বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন।
শেষ বয়সে এ মেয়েই আমার জন্য দরজা খুলে দিবে
যুবকের বিয়ে হল। বিয়ের আয়োজনটা হয়েছিল শহর ছেড়ে কিছুটা দূরে। তাই বাড়ীতে পৌঁছতে পৌঁছতে অনেক রাত হয়ে গেল। রাতের অধিকাংশই কেটে গেছে। বিয়ের প্রথম রাত। যুবকের ইচ্ছা, রাতটি স্বামী-স্ত্রী একান্তে কাটাবে। তাই স্ত্রীকে বললো, রাত তো প্রায় শেষ। সকাল আটটা থেকে আত্মীয়-স্বজন আসতে শুরু করবে। আমরা দশটার আগে ঘুম থেকে উঠবো না। কেউ এসে দরজা নক করলেও খুলবো না। আমার ইচ্ছা এ সময়টা দুজনে একান্তে কাটাবো। যেহেতু স্বামী বলেছে, তাই স্ত্রী চুপ রইল। যথারীতি সকাল আটটায় যুবকের বাবা দরজায় নক করলেন। কামরায় ক্যামেরা লাগানো ছিলো। স্বামী-স্ত্রী ক্যামেরার স্ক্রীনে দেখছিল। যুবক তার পিতাকে দেখে স্ত্রীকে বলল, ‘‘চিন্তা করো না। আমার পাশে শুয়ে থাকো। দশটার আগে দরজা খুলবো না’’! যুবকের পিতা কয়েকবার কলিং বেল চেপে ফিরে গেলেন। আল্লাহর কী মহিমা! একটু পর মেয়ের পিতা এলো! এসে দরজা নক করল। মেয়ে ক্যামেরার স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখলো তার পিতা দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। স্বামী নিষেধ করেছে তাই সে দরজা খুলতে পারছে না। কিন্তু সে সহ্যও করতে পারছে না, পিতা এভাবে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবে আর সে দরজা খুলবে না! এটা কিভাবে সম্ভব? অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার দু’গাল বেয়ে অশ্রু গড়াতে লাগল। স্ত্রীকে কাঁদতে দেখে যুবক বলল, কী হয়েছে তোমার? এভাবে কান্না করছো কেন? স্ত্রী বলল, আমি ভাবতে পারছিনা, বাবা এভাবে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবেন আর আমি দরজা না খুলে শুয়ে থাকবো! স্ত্রীর কষ্ট দেখে স্বামীর মন নরম হলো। সে বললো, আচ্ছা, তাহলে খুলো। স্ত্রী দরজা খুলে দিলো।
আল্লাহ তায়ালা এই দম্পতিকে পরপর তিনটি পুত্রসন্তান দান করলেন। যখনই তাদের সন্তান হত। তার স্বামী একশত লোকের খাবারের আয়োজন করতেন এবং আনন্দের সাথে আক্বীকা করতেন। চতুর্থবার আল্লাহ তাআলা তাদেরকে একটি কন্যাসন্তান দান করলেন। স্বামী যখন মেয়ের আক্বীকা করলেন তখন একশ লোকের পরিবর্তে দুইশত লোকের খাবারের আয়োজন করলেন এবং মন খুলে খরচ করলেন। খাবারের মানও ছিলো আগের তুলনায় অনেক উন্নত। স্ত্রী তার স্বামীর আনন্দের জোয়ার আর খরচের বহর দেখে তো অবাক! বলল, কী ব্যাপার?! আপনি তিন ছেলের আক্বীকায় একশত লোক দাওয়াত করলেন। আর মেয়ের আক্বীকায় দুইশত লোকের আয়োজন করলেন? তাছাড়া খাবারের মানও অনেক উন্নত?! এর রহস্য কী? স্বামী মুচকি হেসে বললেন, মেয়ে হওয়ায় আজ আমি খুবই আনন্দিত। কেননা–
"She is the one who will open the door for me."
‘‘শেষ বয়সে ছেলেরা আমার জন্য দরজা খুলবে না, এ মেয়েই আমার জন্য দরজা খুলে দিবে’’!
আল্লাহ তায়ালা আমাদের কন্যাদেরকে সৎকাজে দৃঢ়তা দান করুন এবং তার প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, আমীন।
﴿وَآخِرُ دَعْوَانَا أَنِ الْحَمْدُ للهِ رَبِّ الْعلَمِيْنَ)
- ⇰ মূল: হযরত মাওলানা জুলফিকার নকশবন্দী দা.বা.
- ⇰ ভাষান্তর: সাখাওয়াতুল্লাহ
0 Comments