আদর্শ বোন (Ideal sister)
اَلْحَمْدُ لِلّهِ وَكَفى وَسَلَامٌ عَلى عِبَادِهِ الَّذِيْنَ اصْطَفى أَمَّا بَعْدُ: فَأَعُوْذُ بِالله مِنَ الشَّيْطنِ الرَّجِيْمِ* بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ *
﴿يَا أُخْتَ هَارُونَ مَا كَانَ أَبُوكِ امْرَأَ سَوْءٍ وَمَا كَانَتْ أُمُّكِ بَغِيًّا﴾
سُبْحنَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ* وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ وَالْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعلَمِيْنَ*
اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّبَارِكْ وَسَلِّمْ
সন্তান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি বড় নেয়ামত। যাকে আল্লাহ তায়ালা সন্তানের নিয়ামত দান করেছেন, তার জন্য অবশ্যক হল আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা। আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন আর যাকে ইচ্ছা পুত্র-কন্যা উভয়ই দান করেন। আবার কাউকে নিঃসন্তান রাখেন। এটা মহান মালিকের-ই মহিমা।
যে পরিবারে পুত্র-কন্যা উভয়ই থাকে সে পরিবার একটি পূর্ণাঙ্গ পরিবার। ছেলে-মেয়ে থাকলে ভাইবোনের প্রশিক্ষণ নিখুঁত ও পূর্ণাঙ্গ হয়। বাবা-মা তাদের কাজে ব্যস্ত থাকলেও বাড়ির ছোটরা দীর্ঘ সময় একসঙ্গে কাটায়। বাবা-মায়ের উদাহরণ একজন ডাক্তারের মতো। যে ওয়ার্ডে এসে চক্কর দিয়ে চলে যায়। আর শিশুদের উদাহরণ নার্সদের মতো, যারা সারাক্ষণ ওয়ার্ডেই থাকে এবং একে অপরের সাথে মিলেমিশে সময় কাটায়।
আধুনিক গবেষণা
গবেষণায় দেখা গেছে, ১১ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা তাদের ৩৩% সময় একসাথে কাটায়। ১৭ বছর বয়সী শিশুরা প্রতি সপ্তাহে ১৪ থেকে ১৭ ঘন্টা একসাথে কাটায়। সপ্তাহে তারা এত পরিমাণ সময় একসাথে কাটায়! তারা একে অপরের সাথে খেলাধুলা করে। মারামারি করে, লড়াই করে। কিছুক্ষণ পর আবার মিলে যায়। দুই থেকে চার বছরের বাচ্চারা প্রতি ১০ মিনিটে একবার একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং চার থেকে সাত বছর বয়সী শিশুরা প্রতি ২০ মিনিটে একবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাদের এমন প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যে, এই বিরোধ তারা দ্রুতই ভুলে যায়।
একটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা
"Those boys who have sisters are nicer and more giving. These boys have less negative emotions and they have no fear. sister makes you more loved."
অর্থাৎ যে ভাইদের বোন আছে এবং বোনেরা ভাইদেরকে আদর করে, ভালোবাসে। এ ধরণের শিশুরা অনুভব করে যে, তারা গুরুত্বপূর্ণ।
"With every sibling chances of divorce reduce."
পরিবারে যত বেশি সন্তান হয় বিবাহ বিচ্ছেদের সম্ভাবনা তত কমে যায়। যেমনিভাবে একটি গাছের শিকড় যত বেশি থাকে গাছটি তত বেশি মজবুত ও শক্তিশালী হয়। তেমনিভাবে একটি পারিবারে সন্তান যত বেশি হয় পারিবারিক বন্ধন তত মজবুত ও শক্তিশালী হয়। বিবাহ বিচ্ছেদের সম্ভাবনাও কমে যায়।
ইউকে ইউনিভার্সিটির গবেষণা
"Sisters make you more communicative."
যে ভাইদের বোন থাকে সেই বাচ্চারা পরস্পর সম্পর্ক তৈরিতে বেশি দক্ষ হয়। কারণ, এ গুণটি বোনদের মাঝে বেশি থাকে ফলে সেটা ভাইদের মধ্যেও চলে আসে।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা
"Boys who have sisters are more empathetic."
"যে ছেলেদের বোন আছে তারা বেশি সহানুভূতিশীল।" অর্থাৎ, যাদের বোন আছে তাদের মাঝে সহানুভূতি বেশি থাকে। কঠিন সময়ে সে তার বোনের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে।
"Boys after Sisters are achievers."
অর্থাৎ, যে ভাই বোনের পরে জন্মগ্রহণ করে, সে সহজেই সফল হয়ে ওঠে। তার কারণ, সে তার বোনের সঙ্গ পেয়েছে।
আদর্শ বোনের গুণ
বোনদের মাঝে এই গুণগুলো থাকা জরুরি
💖 ১. ভালোবাসা ও সহমর্মিতা
বোনদের মাঝে ভালোবাসা ও সহমর্মিতা থাকতে হবে। ভাইদের সাথে ভালোবাসা ও স্নেহ-মমতা নিয়ে থাকবে। হযরত হালিমা সা’দিয়া রাযি.-এর একটি কন্যা ছিল শীমা নামে। যিনি নবীজী সা.-এর দুধবোন। বয়সে নবীজী সা. থেকে বড়। তিনি আল্লাহর নবীকে কোলে নিয়ে এই লরী পাঠ করতেন:
يَا رَبَّنَا أَبْقِ أَخِيْ مُحَمَّدًا
"হে আল্লাহ! আমার ভাই (মুহাম্মদ) কে বাঁচিয়ে রাখুন।"
আমরা যেমন বলি, আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন। নিরাপদ রাখুন। তিনি যেন এ কথাই বলছেন, হে আল্লাহ আমার ভাই মুহাম্মাদকে আমাদের জন্য সুস্থ রাখুন, বাঁচিয়ে রাখুন।
মুসলিম বাহিনী যখন তাঁর গোত্রের উপর বিজয়ী হলেন তখন আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে অনেক গনীমত দান করলেন। গোত্রের সকল বন্দীকে নবীজীর দরবারে হাজির করা হল। এক সাহাবী এসে বললেন, হে আল্লাহর হাবীব! একজন মহিলা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সে বলছে, ‘‘আমি আপনাদের নবীর বোন। তার সাথে দেখা করতে চাই।’’ প্রথমে নবীজি সা. বললেন, আমি আব্দুল্লার একমাত্র পুত্র, আমার কোন বোন ছিল না। তারপর বললেন, আচ্ছা তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। মহিলাকে উপস্থিত করা হল। মহিলা বলল, আমি আপনার বোন শীমা। নবী সা. বললেন, তোমার কাছে কি এর কোন প্রমাণ আছে যে, তুমি আমার বোন? সে বলল, আপনি তখন ছোট ছিলেন। আমি আপনাকে আদর করতাম। মাঝে মাঝে বিরক্তও করতাম। বিরক্ত হয়ে একদিন দাঁত দিয়ে আমার শরীরে কামড় দিয়েছিলেন। ছোট শিশুর যখন প্রথম প্রথম দাঁত গজায় তখন দাঁতের নিচে আঙুল, পেনসিল যা কিছু পড়ে কামড় বসায়। ছোটবেলায় নবীজী সা. তার বোন শীমাকে কামড় দিয়েছিলেন। শীমার শরীরে তখনও সেই কামড়ের দাগ ছিল। প্রমাণ স্বরূপ কাঁধ দেখালেন যেখানে নবীজী সা. ছোটবেলায় তাঁকে কামড় দিয়েছিলেন।
নবীজী সা. ঘটনাটি স্মরণ করে বললেন, হ্যাঁ! তুমি ঠিকই বলেছো। তুমিই আমার সেই দুধবোন যে ছোটবেলায় আমাকে কোলে নিয়ে খাইয়েছ। অতঃপর আল্লাহর নবী তাঁর বোনকে অনেক সম্মান করলেন। হাদীস শরীফে এসেছে, নবীজি সা. মাটিতে চাদর বিছিয়ে বললেন, শীমা! এই চাদরে বসুন। আজ যা চাইবে, তাই তোমাকে দেওয়া হবে এবং যার জন্যই সুপারিশ করবে, গ্রহণ করা হবে। নবীজি সা. স্বীয় আমল দ্বারা প্রমাণ করলেন যে, ভাইয়েরা বোনদেরকে কিভাবে সম্মান করে। বোনদের হৃদয়ে ভাইয়ের প্রতি ভালবাসা থাকা সুনিশ্চিত বিষয়। আমাদেরও অভিজ্ঞতা রয়েছে। একজন মহিলা টেলিফোনে দোয়া চায়। প্রথমে পরিবারের জন্য, স্বামীর জন্য, সন্তান এবং নিজের জন্য। আমরা যখন দোয়া করে দেই। দ্বিতীয়বার বলে, আমার ভাইয়ের জন্যও দোয়া করুন। এতেই বুঝা যায় ভাইদের প্রতি একজন নারীর ভালবাসা কতটা গভীরে!
নবীজি সা.-এর চাচা হযরত হামযা রাযি. উহুদ যুদ্ধে শহীদ হলেন। যুদ্ধ শেষে মুসলমানগণ নিজ নিজ আত্মীয়দের মৃতু দেহ দেখছিলেন। নবীজী সা. দেখলেন হযরত হামযা রাযি.-এর অঙ্গগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। দেহ বিকৃত করা হয়েছে। এ দৃশ্য দেখে তিনি কাঁদতে লাগলেন। ইতোমধ্যে তাঁর নিকট সংবাদ পৌঁছল, হযরত হামযা রা.-এর বোন হযরত সাফিয়্যা রা. তাঁর লাশ দেখতে আসছে। নবীজী সা. তাকে আসতে নিষেধ করলেন। নারীদের মন যেহেতু কোমল হয়। ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে হয়তো সে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না। ভাইবোনের এই মায়া-বন্ধন একটি স্বভাবজাত বিষয়।
হযরত আয়শা রাযি.-এর ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর রাযি. যখন ইন্তেকাল করলেন তখন উম্মুল মুমিনীন কিছু কবিতা আবৃত করেছিলেন। যার অর্থ,
হে ভাই! একটা সময় পর্যন্ত আমরা জাযিমার এমন দুই সহপাঠির মত ছিলাম যে, লোকেরা বলাবলি করতো আমাদের মাঝে কখনো বিচ্ছেদ ঘটবে না। কিন্তু যখন বিচ্ছেদ ঘটল এভাবেই ঘটল। দীর্ঘদিন আমরা একত্রে থাকা সত্ত্বেও কেমন যেন আমরা একসাথে একরাতের বেশি কাটাইনি।
💖 ২. সহযোগিতা পরায়ণ
সর্বদা সহযোগিতা করার মানসিকতা রাখবে। ভাইদের প্রতি খেয়াল রাখবে। ভাইদের থেকে দূরে দূরে থাকা ভালো নয়।
কাফের অবস্থায় হযরত ওমর রা. একদিন চিন্তা করলেন মুসলিমদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। মুসলমানদের নবীকে যদি শহীদ করা যায় তাহলে বাঁশও থাকবে না বাঁশিও বাজবে না। এই প্রত্যয় নিয়ে তরবারি হাতে নবীজি সা.-এর দরবারের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। পথিমধ্যে নুয়াইম বিন আব্দুল্লাহ রাযি.-এর সাথে দেখা। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ওমর! কোথায় যাচ্ছ? উত্তর দিলেন, মুসলমানদের নবী মুহাম্মাদের ফায়সালা করতে যাচ্ছি। আব্দুল্লাহ বিন নুয়াইম রাযি. বললেন আগে নিজের ঘরের খবর নাও। তোমার বোন এবং তোমার ভগ্নিপতি মুসলমান হয়ে গিয়েছে। সংবাদটি তার জন্য সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল। তাই ক্রোধে জ্বলে উঠলেন এবং রাস্তা পরিবর্তন করে বোনের বাড়ির পথ ধরলেন। যখন বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছলেন তখন তারা কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করছিলেন। ওমর রাযি. তাদের কুরআন তেলাওয়াত শুনতে পাচ্ছিলেন। দরজা নক করলেন। বোন টের পেল যে, ওমর এসেছে। তাই দরজা খুলে দিলেন। ওমর রা. ঘরে প্রবেশ করলেন। বোনকে বললেন, তুমি নাকি মুসলমান হয়ে গিয়েছ? বোন বলল, ‘ইসলাম যদি সত্য ধর্ম হয় তাহলে গ্রহণ করতে সমস্যা কোথায়'?
ওমর রাযি. প্রচন্ড রেগে গেলেন এবং ভগ্নিপতিকে মারতে শুরু করলেন। ভগ্নিপতিকে বাঁচাতে এসে বোনও থাপ্পড় খেলেন। এরা আল্লাহর সৃষ্টি নারী জাতি! থাপ্পর খেয়ে চোখে পানি চলে এলো। কিন্তু তার মনোবল এতটাই মজবুত ছিল যে, তিনি ঐ মুহূর্তে অত্যন্ত দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, ওমর! তোমার যা ইচ্ছা করতে পারো, আমরা মুসলমান হয়েছি এখন কিছুতেই ইসলাম থেকে ফিরে আসবো না! একজন বোনের মুখে উচ্চারিত এ বাক্যগুলো এতই জোরালো ছিল যে, তা ওমর রা.-এর মত সিংহ পুরুষের অন্তর নাড়িয়ে দিল। মুহূর্তেই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে গেল। তিনি বললেন, তোমরা এতক্ষণ যা পড়ছিলে আমাকে দাও। বোন বললেন, তুমি অপবিত্র তাই তোমাকে দিতে পারছি না। আগে গোসল করে পরিত্র হতে হবে। ওমর রাযি. গোসল করলেন। তখন তার হাতে সেই অংশটুকু দেওয়া হলো যাতে সূরা ত্বহা লেখা ছিলো। তিনি তেলাওয়াত করলেন। আল্লাহ তায়ালা তার সীনাকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন এবং নবীজি সা.-এর দরবারে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলেন। দেখুন, ওমর রা. -এর ইসলাম গ্রহণের কারণ তাঁর বোনই ছিলেন।
ইমাম মুহাম্মদ ইবনে শীরীন রহ.-এর বোন হাফসা বিনতে শীরীন রহ.। যিনি একজন ক্বারিয়া ছিলেন। কুরআন শুদ্ধভাবে পড়তে ভাইকে সাহায্য করতেন। জীবনের ৩৫ বছর তিনি কুরআনের শিক্ষাদানে কাটিয়েছেন।
আম্মাজান হযরত আয়শা রা.-এর একজন ভাই ছিল মুহাম্মদ বিন আবু বকর রাযি.। তিনি একটি ছেলে আর একটি মেয়ে রেখে মারা যান। ছেলেটির নাম ছিল কাসেম। দুজনকে নিজের ঘরে লালন পালন করেন। আয়েশা রা. খাওয়ানোর সময় তাদের দুজনকে কোলে বসাতেন। এক লোকমা একজনের মুখে অন্য লোকমা অন্যজনের মুখে দিতেন। যখন দুজনই বলতো পেট ভরে গেছে তখন আয়েশা রা. নিজে খেয়েতেন। নিজের ভাইয়ের সন্তানদের এভাবে লালন-পালন করাটাই প্রমাণ করে যে, তিনি তাঁর ভাইকে কী পরিমাণ ভালোবাসতেন!
💖 ৩. বিশ্বস্ততা
বাবা-মা ভাইবোন সবার কাছে বিশ্বস্ত থাকবে।
💖 ৪. সততা
বাবা-মা ভাইবোন কারো সাথে মিথ্যা বলবেনা। পরিবারের সবার মাঝে সততার সাথে থাকবে।
💖 ৫. ভরসার যোগ্য হওয়া
ভাইদেরকে কখনো ধোঁকা দিবেনা। মা-বাবা এবং ভাইবোন তার উপর যে আস্থা রাখে তা কখনো নষ্ট হতে দিবে না। সততা বিসর্জন দেওয়া অনেক বড় অপরাধ। বোনদের থেকে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তার অপবাদ শুধু তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং তার বাবা-মা ভাইবোনসহ বংশের অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন পর্যন্ত গড়ায়। খুতবার শুরুতে যে আয়াত পাঠ করা হয়েছে সেখানে এ বিষয়টি তুরে ধরা হয়েছে। বিবি মারয়াম আ. যখন সন্তান নিয়ে নিজ গোত্রে গেলেন তখন গোত্রের লোকেরা বলল,
يَا أُخْتَ هَارُونَ مَا كَانَ أَبُوكِ امْرَأَ سَوْءٍ وَمَا كَانَتْ أُمُّكِ بَغِيًّا
‘‘হে হারূণ-ভাগিনী, তোমার পিতা তো কোনো অসৎ ব্যক্তি ছিলেন না এবং তোমার মাতাও ছিল না ব্যভিচারিনী।’’
এতেই বোঝা যায় যে বোন এবং কন্যাদের এ ধরনের অপরাধ পুরো বংশের জন্য কলঙ্ক বয়ে আনে।
🔆 বোন থাকার উপকারিতা
💖 ১. বাবা-মার রাগ সহ্য করে
তারা বাবা-মায়ের রাগ সহ্য করে। তাদের রাগ ঠাণ্ডা করে। অনেক সময় দুষ্টুমি করে ভাই আর বকা শুনে বোন।
💖 ২. অন্যের থেকে রক্ষা করে
বোন যদি কয়েক বছরের বড় হয়, তাহলে যে বাচ্চা ভাইকে বিরক্ত করে তার থেকে তাকে দূরে রাখে।
💖 ৩. বেড়ে উঠতে সাহায্য করে
বোন সবসময় ভাইকে বড় করতে সাহায্য করে। পড়াশোনায় সহযোগিতা করে। আমার বড় দুই বোন ছিল। এক বোনের সাথে বয়সের পার্থক্য ছিল ৮/১০ বছরের। তাকে আপা ডাকতাম। অন্য বোনের সাথে বয়সের পার্থক্য ছিলো ৪/৫ বছরে। তাকে 'বাজি' বলতাম। স্কুলের কাজ। খাওয়া-দাওয়া। খেলাধুলা করা এসব কাজ এই বোনের সাথেই চলত। বড় বোন ছিলেন মায়ের মত। তিনি আমাকে গোসল করাতেন। কাপড় পাল্টিয়ে দিতেন। আমাকে এমন যত্ন করতেন, যেমন যত্ন একজন মা সন্তানকে করে থাকে। আর ছোটবোন ছিলেন উত্তম বন্ধুর মত।
💖 ৪. প্রতিটি ক্ষেত্রে সাহায্য করে
বোনেরা প্রতিটা ক্ষেত্রে ভাইকে সহযোগিতা করে। তাদের ভুলগুলোও ঢেকে রাখে। ফলে ভাই দুষ্টুমি করে বাবা-মাকে বিরক্ত করে আর বোনেরা বাবা-মার রাগ ঠাণ্ডা করে। তাদেরকে সন্তুষ্ট করে, ভাইকে বাঁচানোর জন্য অজুহাত দাঁড় করায়।
কখনো এমন হয় যে, ছোট ভাই স্কুলের পড়া ঠিকমত শিখে না। শিক্ষক বলে দেয়, রিপোর্ট বইতে পিতা-মাতার স্বাক্ষর আনতে হবে। শিশুটি পিতার পরিবর্তে তার বোনকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। বোনেরা এতই সরল হয় যে, তারা একটি পরিষ্কার কাগজেও স্বাক্ষর করে দেয়। বোনেরা এভাবেই তার ভাইদের দোষগুলো ঢেকে রাখে।
ঘরে যখন মা না থাকে তখন বড় বোন ভাইদের জন্য খাবার রান্না করে। সময় মত খাবার পরিবেশন করে। তার যত্ন নেয়। কখনো পিতা মাতার সামনে থেকে তাকে রক্ষা করে। ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে। সে ছোটো ভাইকে বুঝানোর চেষ্টা করে, তাদের বংশ কেমন। তার কী করা উচিৎ আর কী করা উচিৎ নয়।
বোন শৈশবের স্মৃতিগুলো ভাইদের সাথে শেয়ার করে। একজন বোন তার ভাইয়ের জন্য জীবনের সেরা বন্ধু হতে পারে।
বাচ্চারা একে অন্যের থেকে কী কী শেখে
শিশুরা যখন এক সাথে থাকে তখন তারা একে অন্যের থেকে অনেক কিছু শিখে।
১. ভালবাসা এবং সহমর্মিতা।
২. মিলেমিশে থাকা। মিলেমিশে কাজ করা।
৩. সহনশীলতা।
আমরা দেখেছি যে প্রায় সময় ভাইয়েরা তাদের বোনকে বিনা কারণে পেরেশান করে। বোন ধৈর্য ধরে। এভাবে তার মধ্যে সহনশীলতা তৈরি হয়।
৪. দ্বন্দ্ব নিরসন করা।
তাদের মধ্যে মারামারি হলে, কিছুক্ষণ পর তারা মিলে যায়। তারা তাদের দ্বন্দ্ব দ্রুত সমাধান করতে পারে।
৫.Assertiveness (আত্মবিশ্বাস)
তাদের মধ্যে Assertiveness (আত্মবিশ্বাস) তৈরি হয়। তারা পরস্পর নিজেদের কথা অন্যকে মানতে বাধ্য করে। তারা যখন নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে, তখন বোন বলে এভাবে করা উচিত। ভাই বলে, না এভাবে করতে হবে। তারা একে অপরের সাথে তর্ক করে। নিজের পক্ষে যুক্তি পেশ করে। একে অপরকে রাজি করায়। সুতরাং যার যুক্তি শক্তিশালী সে অপরকে রাজি করাতে সক্ষম হয়।
৬. কথা বলার দক্ষতা
তারা যখন খেলাধুলা করে তখন একজনের সাথে অন্যজনের কথা বলতে হয়। এভাবে কথা বলার দক্ষতাও তৈরি হতে থাকে।
মোটকথা, বোন সবসময় তার ভাইকে ভালবাসে। সাপোর্ট দেয়। নৈতিকভাবেও এবং আর্থিকভাবেও।
ইমাম বুখারী রহ. -এর বোনের আত্মত্যাগ
ইমাম বুখারী রহ. যৌবনের শুরুর দিকে শিক্ষাসফরের ইচ্ছা করলেন, যাতে ইলম অর্জন করতে পারেন। কিন্তু তার কাছে তখন অর্থ ছিল না। কয়েক দিন এভাবেই কেটে গেল। তার বোন বিষয়টি জানতে পারলেন যে, তার ভাই অর্থের অভাবে সফর করতে পারছেন না। বোন গয়না বিক্রি করে সেই অর্থ তার ভাইকে উপহার হিসাবে পেশ করলেন এবং বললেন, আপনি এটি গ্রহণ করুন এবং ইলম অর্জনের জন্য ভ্রমণ করুন। ইমাম বুখারী বললেন, আরে! তুমি তো তোমার সব গয়না বিক্রি করে ফেলেছ? বোন উত্তর দিলেন, আল্লাহ তায়ালা আমাকে জান্নাতের অলঙ্কার দান করবেন!
সবাইকে অবাক করে ভাইকে বেছে নিলো
আত্মত্যাগী বোন
ইসলামের ইতিহাস পড়লে এমন কিছু ঘটনা দেখতে পাবেন যা আপনাকে অবাক করে দিবে যে, বোনেরা ভাইদের জন্য এমন কিছুও করতে পারে?! একবার মুসলিম বাহিনী রোমানদের বিরুদ্ধে জিহাদে বের হলেন। হজরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. -এর নেতৃত্বে। বাহিনী তারানার তালে তালে অগ্রসর হচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন একটি সুন্দর লাল ঘোড়ায় বসে আছে একজন শাহসাওয়ার। হাতে একটি বল্লম। চলার ভঙ্গিতেই তার সাহসিকতা ফুটে উঠছে। দেখে মনে হচ্ছে সমর বিদ্যায়ও দক্ষ। দেহ জুড়ে বিশাল একটি আলখাল্লা পরে আছে। যার নীচে ঢাকা পড়ে গেছে তার সমস্ত শরীর ও চেহারা। চেনার উপায় নেই। সবুজ পাগড়ী দিয়ে কোমর শক্ত করে বাঁধা। সেনাবাহিনীর আগে আগে বাহাদুরের ন্যায় চলছে। হযরত খালিদ রা. ভাবছেন, যদি জানতে পারতাম কে এই শাহসাওয়ার? আল্লাহর কসম! এই ব্যক্তিকে দেখছি খুবই সাহসী। সবাই তাকে অনুসরণ করছিল। ইসলামী লশকর যখন কাফেরদের মুখামুখি হল তখন তারা দেখল ঐ শাহসওয়ার রোমানদের উপর বাজপাখির মত ঝাঁপিয়ে পড়ছে। তার এক একটি আক্রমণে রোমানদেরকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিচ্ছে। যেদিকে যাচ্ছে লাশের স্তুপ পড়ছে। যুদ্ধ করতে করতে শত্রু বাহিনীর একদম ভিতরে চলে গেছে। বিদ্যুৎ বেগে দু-চারজন সৈন্যকে খতম করে আবার নিজ স্থানে ফিরে আসছে। জীবনের মায়া সে আগেই ত্যাগ করেছিল। তাই বারবার শুত্রুর মাঝে ঢুকে পড়ছে এবং শত্রু বাহিনীকে ছিন্নভিন্ন করে ফিরে আসছে। অনেকেরই ধারণা, এ ব্যক্তি খালিদ বিন ওয়ালিদ রাযি. ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। রাফে ইবনে উমায়রা রাযি. অবাক হয়ে খালিদ রাযি. কে জিজ্ঞেস করলেন, কে এই ব্যাক্তি? তিনি বললেন, আমারও তো একই জিজ্ঞাসা! আমিও অবাক হচ্ছি, এই ব্যক্তি কে হতে পারে?
এরপর উভয় দিক থেকে সামগ্রিক আক্রমণ শুরু হল। হজরত খালিদ রা. সৈন্যবাহিনীর সামনে ছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন সেই শাহসওয়ার রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে। আর তার ঘোড়া ঘামে গোসল হয়ে গেছে। রোমান বাহিনীর ভিতর থেকে সে অগ্নি শিখার মত বেরিয়ে এল। শত্রু পক্ষের যেই তাকে আক্রমণ করতে আসছে, পিঠ দেখিয়ে ভেগে যাচ্ছে। সে একাই একাধিক সৈন্যের সাথে লড়ে যাচ্ছে। সে রোমানদের মধ্যখানে গিয়ে যুদ্ধ করছিল। তাই হযরত খালিদ রাযি. তাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আক্রমণ করে করে তার চারপাশ শত্রু মুক্ত রাখছেন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে সে মুসলিম বাহিনীকে ফিরে এলো। তাকে দেখে মনে হল রক্তে মাখা গোলাপের পাপড়ি। হযরত খালিদ রাযি. তাকে বললেন, তুমি আল্লাহর শত্রুদের উপর রাগ খুব ঠাণ্ডা করলে! এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মহান জিহাদ করেছ! এখন বল তুমি কে? শাহসওয়ার কিছুই বলল না। পূনরায় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হল। হযরত খালিদ রাযি. বললেন, আল্লাহর বান্দা! তুমি তো আমাকে এবং সমস্ত মুসলমানকে অস্থিরতায় ফেলে দিয়েছ। তুমি এতো পরোয়াহীন কেন? আমাকে বল তুমি কে? পীড়াপীড়ির কারণে, সওয়ারী মেয়েলি কণ্ঠে বলল, অবাধ্যতার কারণে আপনাকে এড়িয়ে যাচ্ছি না। বরং আমি লজ্জাবোধ করছি। কারণ, আমি কোনো পুরুষ নই, একজন নারী। হৃদয়ের ব্যথা আমাকে যুদ্ধে নিয়ে এসেছে। খালিদ রা. পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন। সওয়ারী বলল, আমি খুলা বিনতে আজর জারারের বোন। ভাইয়ের গ্রেফতারের সংবাদ পেয়ে যুদ্ধে এসেছি।
ভাই কোনো বিপদে পড়লে বোনেরা এভাবেই কাজে আসে। হযরত খালিদ রা. খুব কাঁদলেন। এবং বললেন, সকলের একযোগে আক্রমণ করা উচিত। আশা করা যায়, আল্লাহ জারারকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেবেন। খাওলা রাযি. বললেন, এই আক্রমণে আমি সামনে থাকব। রাফি রাযি. বলেন আমি খালিদ রা. এর সাথে ছিলাম। আমাদের সম্মুখ দিক থেকে খাওলা রাযি. রোমানদের উপর এমন জোরালো আক্রমণ করল যে, শত্রু বাহিনীর ছত্রবঙ্গ হয়ে গেলো। তার আক্রমণ এতটাই তীব্র ছিলো যে, রোমানরা বলাবলি করতে লাগল, আরবের সবাই যদি এমন বাহাদুর হয় তাহলে কখনই আমরা যুদ্ধে টিকে থাকতে পারব না। খালিদ রা.ও পূর্ণ শক্তি নিয়ে হামলা চালালেন। ফলে রোমানদের পা টলে গেল। কিন্তু রোমানদের সরদার তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করছিল। ফলে তারা পূণরায় কিছুটা সংঘবদ্ধ হয়ে উঠল। অবশেষে খালিদ রা.-এর আক্রমণ এতটাই তীব্র হল যে, রোমানরা ছত্রভঙ্গ করে পালাতে লাগল। হযরত খালিদ রা. রোমানদের সরদার ওরদান পর্যন্ত পৌঁছতে চাইলেন। কিন্তু সে ছিল চারদিক থেকে তাঁর লোকেদের দ্বারা পরিবেষ্টিত। হযরত খাওলা রা.-এর অবস্থা ছিল, সে রোমানদের সৈন্যবাহিনীর ছত্রভঙ্গ করে ভিতরে ঢুকতে পড়ল। আর উঁচু আওয়াজে বলতে লাগল, হায়, জেরারের বদলা! জেরারের বদল! কিছু কবিতা আবৃত্তি করতে লাগল। যার অর্থ- জেরার কোথায়? আমি আজ তাকে দেখছি না কেন? আমার আত্মীয়রাও তাকে দেখছে না। আমার একমাত্র ভাই! ওহে প্রিয় ভাই! তুমি আমার শান্তির বিনষ্ট করে দিয়েছ। আমার ঘুম হারাম করে দিয়েছ। সেদিন তার এই কান্না সাধারণ মুসলমানদরেকেও কাঁদিয়েছিল। মুসলমানরা বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত তুমুল যুদ্ধ চলল। কিন্তু হযরত জেরার রাযি. কে কোথাও পাওয়া গেল না। খাওলা রাযি. তার ভাইকে খুঁজছিল কিন্তু তাকে পেল না। তিনি কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, “হে আমার ভাই! হায়! যদি আমি জানতাম তুমি কোথায় আছো? তোমাকে জঙ্গলে নিক্ষেপ করা হলো নাকি কোথাও জবাই করা হলো? তোমার বোন তোমার জন্য উৎসর্গ হোক! হায়, আমি শুধু এতটুকু জানতে চাই–তোমাকে আমি কখনো দেখতে পাবো কি পাবো না। ভাই! আল্লাহর কসম! তুমি তোমার বোনের হৃদয়ে এমন একটি স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়েছ, যা কখনো ঠাণ্ডা হবার নয়। তুমি কি তাহলে তোমার পিতার সাথে মিলিত হয়েছ? যিনি মহানবী সা.-এর সান্নিধ্যে শহীদ হয়েছিলেন? তাহলে কেয়ামত পর্যন্ত আমার পক্ষ থেকে তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। তার একথা শুনে নিকটে থাকা সকল মুসলিমরা সেদিন কেঁদেছিলেন। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ শত্রু বাহিনীর কিছু সওয়ারকে ছুটে আসতে দেখা গেল এবং ‘আমান’ ‘আমান’ বলে এগিয়ে এলো। হযরত খালিদ রাযি. তাদেরকে নিরাপত্তা দেওয়ার আদেশ দিলেন। খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কারা? তারা বলল, ওয়ারদানের সেনাবাহিনী এবং আমরা হিমসের অধিবাসী। আমরা শান্তি স্থাপন করতে চাই।
হজরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. বললেন, নিরাপত্তা তো হিমসে চলে গেছে। আমরা নির্দিষ্ট সময়ের আগে এখানে শান্তি স্থাপন করতে পারছি না, কিন্তু তোমরা নিরাপদ। আল্লাহ তায়ালা যখন ফয়সালা করবেন এবং আমরা জয়ী হব তখন কথা হবে। তবে এটা বলো যে, আমাদের একজন বীরের সম্পর্কে কিছু জান কিনা যে তোমাদের প্রধানের ছেলেকে হত্যা করেছে? তারা বলল, সম্ভবত আপনি তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছেন যে খালি গায়ে ছিল। আমাদের বহু লোককে হত্যা করেছে এবং প্রধানের ছেলেকেও হত্যা করেছে? খালিদ বললেন, হ্যাঁ, ঠিক ধরেছ।
তারা বলল, তাকে বন্দী করে যখন ওয়ারদানে পৌঁছানো হয় তখন সে তাকে একশত ঘোড়সওয়ারসহ হিমসে পাঠিয়ে দেয়। যাতে সে রাজার কাছে পৌঁছে নিজের বীরত্ব দেখাতে পারে। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. এ সংবাদ শুনে খুবই খুশি হলেন। তিনি রাফে' বিন উমাইরা রা. কে ডেকে বললেন, আপনি পথ খুব ভাল জানেন। নিজের পছন্দ মত কিছু সৈন্য নিয়ে জেরার রা. কে মুক্ত করে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রতিদান গ্রহণ করুন।
রাফে’ রা. একশত যুবকের একটি বাহিনী নিয়ে রওনা হলেন। হযরত খাওলা রাযি. খুব মিনতি করে খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. থেকে অনুমতি নিলেন। হযরত রাফে’ রা.-এর নেতৃত্বে জেরার রা. কে মুক্ত করার লক্ষ্যে হিমসের দিকে রওনা হয়ে গেলেন। বাহিনীটি দ্রুত অগ্রসর হচ্ছিল। 'সালিমা' নামক স্থানে পৌঁছে তিনি সঙ্গীদের বললেন, খুশির সংবাদ! শত্রু বেশি দূরে যেতে পারেনি! তিনি হায়াত নামক উপত্যকায় বাহিনী আত্মগোপন করলেন। এমন সময় ধুলো উড়তে দেখা গেল। রাফে' রা. মুসলমানদেরকে প্রস্তুত হতে বললেন। কাফেররা নিকটে চলে এলো। মুসলমানরা প্রস্তুত ছিলেন। হযরত জেরার রা. তাদের কাছেই বন্দী ছিলেন। তিনি বেদনার সুরে কবিতা আবৃত্তি করছিলেন, হে সংবাদদাতা! আমার জাতি ও খাওলার কাছে আমার বন্দীদশার কথা পৌঁছে দাও। সিরিয়ার কাফের ও বিধর্মীরা আমার চারপাশে জড়ো হয়ে আছে। তারা সবাই বর্ম পরিহিত। হে হৃদয়! তুমি দুঃখ অনুশোচনায় মরে যাও। হে অশ্রু! তুমি আমার চেহারায় প্রবাহিত হয়ে যাও। তুমি কি বলতে পারো, আমি অন্তত একটিবারের জন্য আমার পরিবার এবং খাওলার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবো? আমাদের মাঝে কৃত ওয়াদা তাদেরকে স্বরণ করাতে পারবো?
হযরত খাওলা রাযি. জোরে চিৎকার করে বললেন, ওহে ভাই! তোমার দোয়া কবুল হয়েছে, আল্লাহর সাহায্য এসে গেছে। আমি তোমার বোন খাওলা। একথা বলে সে উচ্চস্বরে তাকবীর দিয়ে আক্রমণ করে দিল। এরপর অন্য মুসলমানরাও তাকবির দিয়ে আক্রমণ করলেন। হযরত হামিদ বিন সালেম রা. বলেন, এই বাহিনীতে আমিও ছিলাম। মুসলমানদের তাকবীরের কারণে আমাদের ঘোড়াগুলো আনন্দে হ্রেষাধ্বনি করতে লাগল। প্রত্যেক মুসলমান একেকজন কাফেরকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিলেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে সবাইকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিলেন। আল্লাহ তায়ালা জেরার রা. কে মুক্ত করলেন। মুসলমানদের গনীমতের মাল অর্জিত হল। হযরত খাওলা রা. বরকতময় এবং সাহসী হাতে বাঁধন তাঁর খুলে দিলেন। ভাইকে অভিবাদন জানালেন। হযরত জেরার রাযি. তাঁর বোনকে অভিনন্দন জানালেন এবং মারহাবা বললেন। তিনি লম্বা একটি বর্শা হাতে ঘোড়ায় চড়ে বসলেন। আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা আদায় করলেন এবং কবিতা আবৃত্তি করতে করতে রওয়ানা হলেন।
একটু ভাবুন, ভাইয়ের ভালোবাসায় একজন বোন কেমন কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। আল্লাহ বোনদের উত্তম প্রতিদান দিন! যারা তাদের ভাইদের জন্য এভাবে আত্মত্যাগ করে। তাদের সম্মান গড়ে তোলে, তাদেরকে ভালবাসে। ভাইকে সমর্থন করে, যত্ন নেয়।
ভাইয়ের সাথে বোনের সম্পর্ক খুবই গভীর হয়ে থাকে। তাই ছোটবেলায় মা তার সন্তানকে ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। বলে ইনি তোমার মামা। আল্লাহ সকল বোনকে ভাইদের সাথে ভালবাসা নিয়ে জীবন কাটানো তৌফিক দান করুন।
কোন কোন বোনের স্বভাব মরিচের মত ঝাঝালো হয়। সামান্যতেই রেগে যায়। ছোট ছোট বিষয়ে ভাইকে অভিশাপ দিতে থাকে। এ ধরনের বোনকে আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না। এমনকি শরিয়তও সমর্থন করে না। যদি ভাই কখনো কষ্ট দেয়, ধৈর্য ধরবে। তার জন্য দোয়া করবে।
বোনদের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ নসিহত
যে বোনেরা ভাইদেরকে বদ-দোয়া দেয়, এটা তার নিজের জন্যও পেরেশানীর কারণ হতে পারে। সারা জীবন কাঁদতে হতে পারে। ভাইকে অভিশাপ দিয়েছি বলেই ভাই আজ এই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বলা যায় না, হতে পারে সে সময়টা দোয়া কবুলের সময় ছিলো। তাই বোনদের বলবো, ভাইদের বাড়াবাড়ির উপর ধৈর্য ধরুন। বদ দোয়া এবং অভিশাপ দিবেন না। তাদেরকে ভালোবাসুন। সম্মান করুন। কোনো একদিন এই ভাই পিতার ন্যায় মাথার ছায়া হতে পারে।
আল্লাহ তায়ালা ঘরে ঘরে মুহাব্বত, ভালোবাসা, তাকওয়া ও দ্বীনদারির সাথে জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العلمين
0 Comments